জেহাদের গুরুত্ব

জিহাদ

জিহাদের ফযীলত

আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ

“আর মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর যেমন তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে সর্বাত্মকভাব। আর জেনে রাখ! আল্লাহ অবশ্যই মুত্তাকীদের সঙ্মে আছেন।” (সূরা তাওবাঃ ৩৬)

তিনি আরো বলেছেনঃ

“জিহাদ তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে। অথচ তা তোমাদের কাছে কষ্টকর মনে হয়। হতে পারে তোমরা কোন জিনিসকে অপছন্দ কর অথচ তা তোমাদের জন্য ভালো্।  আর হতে পারে তোমরা  কোন জিনিসকে ভালোবাস অথচ তা তোমাদের জন্য খারাপ। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।” (সূরা বাকারাহঃ ২১৬)

তিনি আরো বলেছেনঃ

“তোমরা ভারী হালকা যাই হও না কেন (আল্লাহর পথে) বের হও আর জিহাদ কর তোমাদের ধন-দৌলত ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে।” (সূরা তাওবাঃ ৪১)

তিনি আরো বলেছেনঃ

“অবশ্যই আল্লাহ মু’মিনদের কাছ থেকে তাদের জান ও মাল কিনে নিয়েছেন, এর বিনিময়ে তারা জান্নাত লাভ করবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, যাতে তাতে হত্যা করে ও তাদেরকে হত্যা করা হয়। তার উপর সাচ্চা ওয়াদা করা হয়েছে তাওরাতে, ইঞ্জিলে ও কুরআনে আর আল্লাহর চেয়ে বিশি কে ওয়াদা পূরণ করে? কেজেই যে কেনা-বেচার সাথে তোমরা সংযুক্ত হয়েছ তার জন্য তোমরা আনন্দ প্রকাশ কর। আর এটিই হচ্ছে বিরাট সাফল্য।” (সূরা তাওবাঃ ১১১)

তিনি আরো বলেছেনঃ

“যে সব মুসলমান বিনা ওযরে ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করে তারা উভয়ে সমান হতে পারে না। যারা নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, ঘরে বসে থাকা লোকদের উপর আল্লাহ তাদেরকে শ্রেষ্ঠ মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। আল্লাহ সবাইকে কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর মুজাহিদেরকে আল্লাহ ঘরে বসে থাকা লোকদের উপর বিরাট প্রতিদান দিয়েছেন। অর্থাৎ অনেক মর্যাদা যা আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া যাবে এবং মাগফিরাত ও রহমত। ্‌আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও কুরুণাময়। (সূরা নিসাঃ ৯৫-৯৬)

তিনি আরো বলেছেন

“হে বিশ্বাসীগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দিব না, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা করবে? (তা এই যে,) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য  শ্রেয় যদি তোমরা জানতে। আল্লাহ তোমাদের পাপরাশিকে ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে; যার নিম্নদিশে নদীমালা প্রবাহিত এবং (প্রবেশ করাবেন) স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহা সাফল্য। আর অপর আরেকটি বিষয় যা তোমরা ভালোবাস আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং দ্রুত বিজয়। কাজেই বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা সাফ ১০-১৩)

 

এ অধ্যায়ে কুরআনের বহু আয়াতের সন্ধান পাওয়া যায় এবং সেগুলো বহুল পরিচিত।

আর জিহাদের ফযীলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস রয়েছে। এগুলোর থেকে মাত্র কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলঃ

১২৮৬. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ কাজটি উত্তম? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। বলা হলোঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। বলা হলোঃ তারপর কোনটি। তিনি বললেনঃ ‘মাবরুর’ (আল্লাহর নিকট মকবুল) হজ্জ। (বুখারী ও মুসলিম)


১২৮৭. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর নিকট কোন্ কাজটি সর্বাপেক্ষা প্রিয়? তিনি বললেন, যথাসময়ে নামায পড়া। আমি বললামঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ পিতা-মাতার সাথে ভাল ব্যবহার করা। আমি বললামঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। (বুখারী ও মুসলিম)


১২৮৮. হযরত আবূ যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোন কাজটি সর্বাপেক্ষা উত্তম? তিনি বললেনঃ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও তাঁর পথে জিহাদ করা। (বুখারী ও মুসলিম)


১২৮৯. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহর পথে (জিহাদে) একটি সকাল বা একটি সন্ধ্যা অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তা অপেক্ষা উত্তম। (বুখারী ও মুসলিম)


১২৯০. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট এসে বলল, কোন্ ব্যক্তি সর্বোত্তম। তিনি বললেন, সেই মু’মিন (সর্বোত্তম) যে আল্লাহর পথে নিজের প্রাণ ও সম্পদ দিয়ে জিহাদ করে। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেনঃ এমন মু’মিন যে কোন গিরিপথে বসে আল্লাহর ইবাদত করে এবং নিজের অনিষ্ট থেকে লোকদেরকে রক্ষা করে। (বুখারী ও মুসলিম)


১২৯১. হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেয়া দুনিয়া ও দুনিয়ার ওপর যা কিছু আছে সব থেকে উত্তম। আর তোমাদের কারো জান্নাতের এক চাবুক পরিমাণ স্থান দুনিয়া ও তার ওপর যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম। আর কোন বান্দা সন্ধ্যায় আল্লাহর পথে (জিহাদের জন্য) বের হওয়া অথবা সকালে বের হওয়া দুনিয়া ও তার উপর যা কিছু আছে সব কিছু থেকে উত্তম। (বুখারী ও মুসলিম)


১২৯২. হযরত সালমান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ একদিন ও একরাত স্বদেশের সীমান্ত পাহারা দেয়া এক মাস ধরে রোযা রাখা ও রাতে ইবাদাত করা অপেক্ষা বেশি কল্যাণময়। এ অবস্থায় যদি সে মারা যায় তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল মরার পরও তা তার জন্য জারী থাকবে। তার রিযকও জারী থাকবে এবং কবরের ফিতনা থেকেও সে থাকবে নিরাপদ। (মুসলিম)


১২৯৩. হযরত ফুদ্বালা ইবনে উবাইদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ মৃত্যুর পর প্রত্যেক মৃতের আমল খতম করে দেয়া হয়। তবে আল্লাহর পথে স্বদেশের সীমান্ত পাহারা দানকারীর আমল কিয়ামত পর্যন্ত বাড়তে থাকবে এবং কবরের ফিতনা থেকেও সে নিরাপদ থাকবে। (আবু দাঊদ ও তিরমিযী) ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি সহীহ ও হাসান।


১২৯৪. হযরত উসমান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর পথে একদিন স্বদেশের সীমান্ত পাহারা দেয়া হাজার দিন অন্য (নেকীর) স্থানসমূহে লিপ্ত থাকা অপেক্ষা উত্তম। (তিরমিযী) ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।


১২৯৫. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে বের হবে আল্লাহ তার যিম্মাদার হবেন, আমার পথে জিহাদ করা, আমার প্রতি ঈমান আনা ও আমার প্রেরিত রাসূলদেরকে সত্য বলে মেনে নেয়া ব্যতীত অন্য কোন কারণ যাকে ঘর থেকে বের করেনি, আল্লাহ তার দায়িত্ব নিয়েছেন যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন (যদি সে শহীদ হয়ে গিয়ে থাকে) অথবা তার ঘরের দিকে তাকে সফলভাবে প্রত্যাবর্তন করাবেন সাওয়াব অথবা গনীমাত সহকারে, যেখান থেকে সে (জিহাদের জন্য) বের হয়েছিল। আর মুহাম্মাদের প্রাণ যে সত্তার হাতের মুঠোয় তাঁর কসম, সে আল্লাহর পথে যে কোন আঘাত পাবে সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে এমনভাবে হাযির হবে যেমন আঘাত পাবার দিন তার শারীরিক কাঠামো ছিল। তার বর্ণ হবে তখন রক্ত বর্ণ, তার গন্ধ হবে মিশকের গন্ধ। আর যে সত্তার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তাঁর কসম! মুসলমানদের ওপর যদি এটা কঠিন না হতো তবে যে সেনাদলটি আল্লাহর পথে জিহাদে লিপ্ত তার থেকে আমি কখনো পেছনে অবস্থান করতাম না। কিন্তু না আমি নিজেই এতটা স্বচ্ছল হতে পেরেছি যার ফলে সবাইকে সাওয়ারী দিতে পারি আর না মুসলমানদের এতটা স্বচ্ছলতা আছে। আর এটা তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হবে যে, তাদেরকে পিছনে রেখে আমি জিহাদে চলে যাব। আর সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, আমি অবশ্যই পছন্দ করি যে, আমি আল্লাহর পথে লড়াই করে শহীদ হয়ে যাব, তারপর আবার লড়াই করে শহীদ হয়ে যাব। (মুসলিম)


১২৯৬. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহর পথে আহতদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি থাকবে না যে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আসবে না যার আহত স্থান থেকে রক্ত ঝরতে থাকবে। এর বর্ণ হবে রক্তবর্ণ এবং এর গন্ধ হবে মিশকের গন্ধ। (বুখারী ও মুসলিম)


১২৯৭. হযরত মু’আয (রা) নবী করীম (সা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ কোন মুসলিম ব্যক্তি দু’বার উট দোহনের মধ্যবর্তী সময় পরিমাণ ক্ষণকালের জন্যও আল্লাহর পথে জিহাদ করবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। আর যাকে আল্লাহর পথে আহত করা হয়েছে অথবা যার গায়ে কোন আঁচড় কাটা হয়েছে, কিয়ামতের দিন সে তাকে একেবারে তরতাজা যেমনটি সে তার সংঘটনকালে ছিল ঠিক তেমনটি নিয়ে হাযির হবে। এর রং হবে জাফরানী এবং সুগন্ধ হবে মিশকের মত। (আবু দাঊদ ও তিরমিযী)


১২৯৮. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর একজন সাহাবী একটি গিরিপথ অতিক্রম করছিলেন। সেই গিরিপথে ছিল একটি ছোট মিষ্টি পানির ঝরণা। ঝরণাটি তাঁকে মুগ্ধ করলো। তিনি মনে মনে বললেনঃ জনতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যদি আমি এই গিরিপথে অবস্থান করতে পারতাম তাহলে বড়ই ভালো হতো। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট থেকে অনুমতি না নিয়ে আমি এটা করতে পারি না। ফলে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) কে একথা বললেন। তিনি বললেন, নাঃ এমনটি করো না। কারণ তোমাদের কারোর আল্লাহর পথে অবস্থান করা নিজের ঘরে বসে সত্তর বছর নামায পড়া অপেক্ষা অনেক বেশি ভাল। এটা কি তোমরা পছন্দ কর না, আল্লাহ তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন ও তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, আল্লাহর পথে জিহাদ কর। যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে দু’বার উট দোহনের মধ্যবর্তী সময়ের পরিমাণ ক্ষণিকের জন্য জিহাদ করবে তাঁর জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। (তিরমিযী)


১২৯৯. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বলা হলোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোন্ কাজটি (সওয়াবের দিক দিয়ে) আল্লাহর পথে জিহাদের সমকক্ষ? জবাব দিলেনঃ তোমরা কি জিহাদ করতে সক্ষম নও? সাহাবা কিরাম (রা) এ প্রশ্নটি দু’বার কি তিনবার পুনরাবৃত্তি করলেন। আর তিনি প্রত্যেকবারই একই জবাবের পুনরাবৃত্তি করেনঃ “তোমরা কি জিহাদ করতে সক্ষম নও? “তারপর বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদকারী মুজাহিদের উদাহরণ হচ্ছে রোযাদার, নামায আদায়কারী ও কুরআনের আয়াত বিনীত হৃদয়ে একাগ্রতার সাথে তিলাওয়াতকারীর মত, যে এ আল্লাহর পথে জিহাদকারী মুজাহিদ ফিরে আসা পর্যন্ত নামায ও রোযায় লিপ্ত থাকে গাফিল হয় না। (বুখারী ও মুসলিম)

তবে হাদীসে ইমাম মুসলিম বর্ণিত হাদীসের মূল পাঠ দেয়া হয়েছে। আর ইমাম বুখারীর এক রেয়ায়েতে বলা হয়েছেঃ এক ব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন আমলের খবর দিন যা (সাওয়াবের দিক দিয়ে) জিহাদের সমকক্ষ। জবাব দিলেনঃ আমি এমন কোন আমল দেখি না। তারপর বললেনঃ তুমি কি এমনটি করতে পারবে, যখন মুজাহিদ (জিহাদের জন্য) বের হবে তখন তুমি নিজের মসজিদে চলে যাবে, এরপর নামায পড়তে থাকবে, অনবরত পড়তে থাকবে, কখনো বিরত হবে না এবং রোযা রাখতে থাকবে, একবারও ইফতার করবে না? সে ব্যক্তি বললেন, এ কাজ করার ক্ষমতা কার আছে?


১৩০০. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম জীবন হচ্ছে সে ব্যক্তির জীবন যে সব সময় ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরে আল্লাহর পথে জীহাদ করার জন্য তৈরি থাকে। যেখানেই সে কোন বিপদে বা পেরেশানীর কথা শুনতে পায় সংগে সংগেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে বাতাসের বেগে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হত্যা অথবা সম্ভব্য মৃত্যুকে তার পথে তালাশ করতে থাকে। আর দ্বিতীয় সে ব্যক্তির জীবন যে পর্বতের চূড়ায় বা উপত্যকায় কয়েকটি ছাগল সংগে করে বসবাস করে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় ও মৃত্যু পর্যন্ত নিজের প্রতিপালক প্রভুর ইবাদত করে এবং মানুষের কল্যাণ ব্যতীত সে আর কিছুই করে না।  (মুসলিম)


১৩০১. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদকারী মুজাহিদের জন্য আল্লাহ্‌ তা’আলা জান্নাতে ১০০টি দরজাও তৈরী করেছেন। তার দু’টি দরজার মাঝখানের দূরত্ব আসমান ও যমীনের মাঝখানের দূরত্বের সমান। (বুখারী)


১৩০২. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহকে প্রতিপালক হিসেবে ইসলামকে দীন (একমাত্র জীবন ব্যবস্থা) হিসেবে গ্রহণ করে এবং মুহাম্মাদকে রাসূল বলে স্বীকার করে সন্তুষ্ট হয়েছে, তার জন্য জান্নত ওয়াজিব হয়ে গেছে।” আবু সাঈদের নিকট একথাটি বিস্ময় কর মনে হলো। তিনি আরয করেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! কথাটি আমাকে আবার বলুন। অতএব তিনি তার জন্য কথাটি পুনুরাবৃত্তি করলেন, তারপর বললেনঃ আর একটি বিষয় রয়েছে যার সাহায্যে আল্লাহ জান্নাতে তাঁর বান্দার ১০০টি মর্যাদা বুলন্দ করে দিবেন। আর তার প্রত্যেক দু’টি মর্যাদার মধ্যে দূরত্ব হবে আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানের দূরত্বের সমান। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) আরয করেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! সেটা কি? জবাব দিলেনঃ “সেটা হচ্ছে আল্লাহর পথে জীহাদ।”  (মুসলিম)


১৩০৩. হযরত আবু বকর ইবনে আবু মূসা আল-আশ’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতা আবু মূসা আল আশ’আরী (রা) থেকে তিনি শত্রুর উপস্থিতিতে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “জান্নাতের দরজা তরবারির ছায়াতলে অবস্থিত।” (একথা শুনে) উসকো খুশকো চেহারার এক ব্যক্তি বললেনঃ হে আবূ মূসা! আপনি কি নিজে রাসূলুল্লাহ (সা) কে একথা বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ঐ ব্যক্তি তার সাথীদের কাছে ফিরে এসে বললেন, আমি তোমাদেরকে সালাম জানাচ্ছি। একথা বলে তিনি নিজের তরবারির খাপ ভেঙ্গে ফেললেন এবং তা ছুড়ে ফেলে দিলেন। তারপর তলোয়ার নিয়ে দুশমনদের দিকে চলে গেলেন এবং তাদের সাথে লড়াই করে অবশেষে শহীদ হয়ে গেলেন। (মুসলিম)


১৩০৪. হযরত আবু আবস আবদুর রহমান ইবনে জুবাইর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “আল্লাহর পথে বান্দার দু’টি পা ধুলি ধূসরিত হবে এবং আবার তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে, এমনটি কখনো হতে পারে না।” (বুখারী)


১৩০৫. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, এমনকি দুধ দোহন করে নেয়ার পর আবার তা স্তনে ফেরত যাবে (তবুও সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না)।   আর কোন বান্দার ওপর আল্লাহর পথের ধুলি ও জাহান্নামের ধোঁয়া একত্র হবে না। (তিরমিযী) ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।


১৩০৬. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ “দু’টি চোখকে কোন দিন জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে আর যে চোখ আল্লাহর পথে রাত জেগে পাহারা দিয়েছে।” (তিরমিযী)


১৩০৭. হযরত যাইদ ইবনে খালিদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধকারী মুজাহিদকে জিহাদের সরঞ্জাম দেয় সেও মুজাহিদ দলের অন্তর্ভুক্ত হয় আর যে ব্যক্তি মুজাহিদের অবর্তমানে তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেয় সেও মুজাহিদ দলের অন্তর্ভুক্ত।” (বুখারী ও মুসলিম)


১৩০৮. হযরত আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “সর্বাপেক্ষা উত্তম দান হচ্ছে আল্লাহর পথে ছায়ার জন্য একটি তাঁবু দান করা। আর আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য একটি খাদিম দিয়ে দেয়া এবং আল্লাহর পথে (মুজাহিদকে) বংশ বৃদ্ধির জন্য একটি উট দেয়া।” (তিরমিযী)


১৩০৯. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। আসলাম গোত্রের এক যুবক বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি জিহাদে যেতে চাই, কিন্তু আমার নিকট এমন কোন বস্তু নেই যা দ্বারা আমি জিহাদের সরঞ্জাম প্রস্তুত করবো। তিনি বললেনঃ অমুকের নিকট যাও। কারণ সে জিহাদে যাওয়ার জন্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছিল তারপর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। যুবকটি তার নিকট গেল এবং বললঃ রাসূলুল্লাহ (সা) আপনাকে সালাম দিয়েছে এবং জিহাদে যাওয়ার জন্য আপনার যা কিছু সরঞ্জাম রয়েছে তা আমাকে দিয়ে দিন। সে তার স্ত্রীকে বললঃ হে অমুক! আমি যা কিছু সরঞ্জাম তৈরি করেছিলাম সব একে দিয়ে দাও। তার মধ্যে থেকে কোন একটি বস্তুও রেখে দিবে না। কারণ আল্লাহর কসম! তার মধ্য থেকে কোন একটি বস্তুও তুমি রেখে দিও না। তবে আল্লাহ তার মধ্যে তোমাকে বরকত দান করবে। (মুসলিম)


১৩১০. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) (মুজাহিদদের একটি দলকে) বনী লাইয়ান গোত্রের দিকে পাঠান এবং বলেনঃ প্রত্যেক দু’জনের মধ্যে একজনের জিহাদে যেতে হবে এবং সাওয়াব তারা দু’জনেই পাবে। (মুসলিম)

মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছেঃ প্রত্যেক দু’জনের মধ্য থেকে একজন যেন জিহাদের জন্য বের হয়। তারপর ঘরে অবস্থানকারীকে বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জিহাদে গমনকারীদের তাদের পরিবার পরিজন ও ধন-সম্পদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে সে গমন মুজাহিদের সাওয়াবের অর্ধেক পাবে।”


১৩১১. হযরত বারাআ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা)-এর নিকট এক ব্যক্তি লৌহবর্ম পরিহিত অবস্থায় এসে বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি প্রথমে জিহাদ করবো, না প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করবো? তিনি বললেনঃ প্রথমে ইসলাম গ্রহণ কর, তারপর জিহাদ কর। লোকটি ইসলাম গ্রহণ করলো, তারপর জিহাদে লিপ্ত হয়ে শহীদ হয়ে গেলো। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ এ ব্যক্তি আমল করলো কম, অথচ বিপুল প্রতিদান লাভ করলো। (বুখারী ও মুসলিম)


১৩১২. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে আর পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাইবে না, যদিও সারা দুনিয়ার সমস্ত বস্তু সে লাভ করে। তবে শহীদ যখন তার মর্যাদা দেখবে, সে আকাঙ্ক্ষা করবে আবার দুনিয়ায় ফিরে আসার এবং দশবার আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করার। অন্য বর্ণনা আছে, শাহাদাতের মর্যাদা দেখার কারণে। (বুখারী ও মুসলিম)


১৩১৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “মহান আল্লাহ ঋণ ব্যতীত শহীদের সব কিছু (গুনাহ) মাফ করে দিবেন।” (মুসলিম)

মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছেঃ আল্লাহর পথে শাহাদাতবরণ ঋণ ব্যতীত বাকি সমস্ত কিছুর কাফফার হয়ে যায়।


১৩১৪. হযরত আবু কাতাদা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবার জন্য দাঁড়িয়ে বললেন যে, আল্লাহর পথে জিহাদ ও আল্লাহর ওপর ঈমান আনাই হচ্ছে সর্বোত্তম আমল। (এ কথা শুনে) এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি মনে করেন, আমি যদি আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যাই, আমার সমস্ত গুনাহর কাফফারা হয়ে যাবে কি? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ হ্যাঁ। যদি তুমি আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যাও এবং (এর ওপর) অবিচল থাক, সাওয়াবের আশাবাদী হও, অগ্রগামী হও, পেছন ফিরে পালাতে না থাক। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা) আবার বললেনঃ তুমি কি বলছিলে? ঐ ব্যক্তি বললোঃ আপনি কি মনে করেন আমি যদি আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যাই তাহলে এতে আমার সমস্ত গুনাহর কাফফারা হয়ে যাবে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তবে তুমি যদি অবিচল থাক, ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় এ কাজ কর এবং ময়দানে শত্রুর দিকে অগ্রগ্রামী হও, পেছন ফিরে পালাতে না থাক। তবে ঋণ ব্যতীত সব গুনাহর কাফফারা হয়ে যাবে। জিবরীল (আ) এ মাত্র আমাকে একথা বলে গেলেন। (মুসলিম)


১৩১৫. হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি যদি শহীদ হয়ে যাই, তবে আমার স্থান হবে কোথায়? তিনি বললেন জান্নাতে। (একথা শুনে )ঐ ব্যক্তি নিজের হাতে যে খেজুরগুলো ছিল সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিল, তারপর লড়াই করে শেষ পর্যন্ত শাহাদতবরণ করল। (মুসলিম)


১৩১৬. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ও সাহাবা কিরাম (রা) রওয়ানা হয়ে গেলেন এবং মুশরিকদের আগে বদরে পৌঁছে গেলেন। মুশরিকরাও এসে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ যতক্ষণ আমি অগ্রসর না হই তোমাদের কেউ যেন কোন কিছুর দিকে এগিয়ে না যায়। তারপর যখন মুশরিকরা কাছে এসে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ এবার জান্নাতে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যাও, যে জান্নাতের বিস্তৃতি হচ্ছে আকাশ ও পৃথিবীর সমান। হযরত আনাস (রা) বললেন, উমাইর ইবনুল হুমাম আনসারী (রা) বলতে লাগলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! জান্নাতের বিস্তৃতি আকাশ ও পৃথিবীর সমান? তিনি বললেন, সে বলল, বাহ! বাহ! অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ এতে অবাক হবার কি আছে। তুমি বাহ! বাহ! বলছ কেন? উমাইর (রা) বললেনঃ না, আল্লাহর কসম তা নয়। একথা আমি কেবলমাত্র এ আশায় বলেছি যাতে আমি তার অধিবাসী হতে পারি। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তুমি নিশ্চিত জান্নাতের অধিবাসী। একথা শুনে উমাইর (রা) নিজের তীরদানী থেকে খেজুর বের করলেন এবং তা খেতে থাকলেন। তারপর বলতে লাগলেনঃ যদি আমার এ খেজুরগুলো খেয়ে শেষ করা পর্যন্ত আমি জীবিত থাকতে চাই তাহলে তো অনেক সময় লাগবে। (একথা বলে) তার কাছে যা খেজুর ছিল সবগুলো খেজুর দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে কাফিরদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে অবশেষে শহীদ হয়ে গেলেন। (মুসলিম)


১৩১৭. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কয়েকজন লোক নবী করীম (সা)-এর খেদমতে হাযির হয়ে বললোঃ আমাদের সাথে এমন কিছু লোক পাঠিয়ে দিন যারা আমাদের কুরআন সুন্নাতের শিক্ষাদান করবে। তিনি সত্তর জন আনসারকে তাদের সাথে পাঠালেন। তাদের কারী (কুরআন বিশেষজ্ঞ) বলা হতো। তাদের সাথে ছিলেন আমার মামা হারামও। তাঁরা কুরআন পড়তেন এবং রাতে কুরআনের দরস দিতেন ও শিক্ষার কাজে নিরত থাকতেন। দিনের বেলা তাঁরা পানি এনে মসজিদে রাখতেন ও কাঠ সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে আহলে সুফফাহ ও কপর্দক শূন্য দরিদ্রদের জন্য খাবার কিনতেন। নবী করীম (সা) এ সাহাবীগণকে তাদের সাথে পাঠিয়ে দিলেন। তারা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছার আগেই এ সাহাবীদেরকে হত্যা করলো। তাদের প্রত্যেককে বললঃ হে আল্লাহ! আমাদের পয়গাম আমাদের নবীর নিকট পৌঁছে দিন যে, আমরা আপনার নিকট পৌঁছে গেছি, আমরা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট এবং আপনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট। এক ব্যক্তি আনাসের মামা হারামের নিকট পেছন থেকে এসে তাঁকে বর্শা বিদ্ধ করলো। বর্শাটি তাঁকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল। হারাম (রা) বললেনঃ কাবার রবের কসম! আমি সফলকাম হয়ে গেছি। (ওহীর মাধ্যমে এ খবর জেনে) রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ তোমাদের ভাইদেরকে হত্যা করা হয়েছে এবং তারা (মৃত্যুকালে) বলেছেঃ হে আল্লাহ! আমাদের নবীকে আমাদের পক্ষ থেকে এ পয়গাম পৌঁছে দিন যে, আমরা আপনার নিকট এসে গেছি, আমরা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট আছি এবং আপনিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট আছেন। (বুখারী ও মুসলিম)


১৩১৮. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার চাচা আনাস ইবনে নদ্বর (রা) বদরের যুদ্ধে শরীক হতে পারেননি। তিনি আরয করেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি মুশরিকদের সাথে যে প্রথম যুদ্ধ করেছেন তাতে আমি শরীক হতে পারিনি। আগামীতে মুশরিকদের সাথে যে সব যুদ্ধ হবে তাতে যদি আমি শরীক থাকি তাহলে আল্লাহ দেখে নিবেন আমি কি করি। কাজেই যখন ওহুদের যুদ্ধ হলো এবং মুসলমানরা বাহ্যত পরাজয় বরণ করলো, তখন তিনি বলতে লাগলেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যা সাহাবায়ে কেরাম করেছেন এবং এরা (অর্থাৎ মুশরিকরা) যা কিছু করেছে তা থেকে নিজেকে দায়িত্বমুক্ত ঘোষণা করছি। একথা বলে তিনি এগিয়ে গেলেন। সামনে থেকে সা’দ ইবনে মু’আয (রা)-এর সাথে সাক্ষাত হল। তখন বলতে লাগলেনঃ হে সাদ ইবনে মু’আয! নদ্বরের রবের কসম! আমি ওহুদ পাহাড়ের নিকট থেকে জান্নাতের খুশবু পাচ্ছি। সা’দ ইবনে মু’আযা (রা) বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! তিনি যা করেছেন আমি নিজে তা করতে পারিনি। হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেছেনঃ আমরা তাঁর (আনাস ইবনে নদ্বরের) শরীরে আশিরও বেশি তলোয়ার, বর্শা ও তীরের আঘাত পেলাম এবং আমরা তাঁকে এমন অবস্থায় পেলাম তখন তিনি শহীদ হয়ে গেছেন এবং মুশরিকরা তাঁর চেহারা বিকৃত করে দিয়েছে। তাঁর বোন ব্যতীত কেউ তাঁকে চিনতে পারলেন না এবং তিনিও তাঁকে চিনলেন তাঁর আঙুলের ডগাগুলো দেখে। হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেছেনঃ আমরা অথবা মনে করি আমরা ধারণা করি যে, (আরবী…………………) আয়াতটি তাঁর এবং তাঁর মতো লোকদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছেঃ “মু’মিনদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত তাদের ওয়াদাকে সত্য প্রমাণ করেছে। আবার তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে” আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (সূরা আহযাবঃ ২৩)


১৩১৯. হযরত সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আমি আজ রাতে দু’জন লোককে আমার নিকট আসতে দেখলাম। তারা আমাকে সাথে নিয়ে একটি গাছে চড়লো। তারপর আমাকে একটি ঘরে নিয়ে গেলো, সেটা ছিল বড়ই সুন্দর ও বড়ই চমৎকার। তা অপেক্ষা সুন্দর ঘর আমি আর কখনো দেখিনি। তারা দু’জন বললোঃ এটি হচ্ছে শহীদদের ঘর। (বুখারী)


১৩২০. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উম্মে রাবী’ বিনতে বারা’আ (রা) এলেন আর তিনি হচ্ছেন হারিসা ইবনে সুরাকা (রা)-এর মাতা। উম্মে রাবী’ (র) বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি আমাকে হারিসা (রা) সম্পর্কে কিছু বলবেন না? হারিসা বদরের দিন শহীদ হয়েছেন। যদি সে (হারিসা) জান্নাতে থাকে, তবে আমি সবর করবো। আর যদি অন্য কিছু হয়ে থাকে, তবে আমি তার জন্য কান্নাকাটি করে নিজের মনের দুঃখ মিটাব। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে উম্মে হারিসা (হারিসার মা!) জান্নাতের বিভিন্ন স্তর আছে আর তোমার ছেলে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর ফিরদাউস লাভ করেছে। (বুখারী)


১৩২১. হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতাকে নবী করীম (সা)-এর নিকট আনা হল। তাঁর চেহারা বিকৃত করা হয়েছিল। তাঁর লাশটি তাঁর সামনে রেখে দেয়া হলো। আমি তাঁর চেহারা থেকে চাদর উঠাতে গেলাম। এতে আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে নিষেধ করলো। নবী করীম (সা) বললেনঃ ফিরিশতারা সব সময় তাঁর ওপর নিজেদের ডানা দিয়ে তাঁকে ছায়া দিচ্ছে। (বুখারী ও মুসলিম)


১৩২২. হযরত সাহল ইবন হুনাইফ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে আল্লাহ তা’আলার নিকট শাহাদাত লাভের জন্য দু’আ করে, তবে সে নিজের বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেও মহান আল্লাহ তাকে শহীদদের স্তরে পৌঁছিয়ে দেন।  (মুসলিম)


১৩২৩. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে শাহাদাত লাভের আকাঙ্ক্ষা করে তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করা হয়, যদিও সে শহীদ না হয়।”   (মুসলিম)


১৩২৪. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ শাহাদাত লাভকারী কোন ব্যক্তি হত্যার কষ্ট অনুভব করে না, তবে তোমাদের কেউ পিঁপড়ার কামড়ে যতটুকু কষ্ট অনুভব করে কেবল ততটুকু কষ্টই অনুভব করে মাত্র। (তিরমিযী) ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান ও সহীহ।


১৩২৫. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আওফা (রা) থেকে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা) দুশমনের সাথে মুকাবিলা করতে যাচ্ছিলেন এবং তিনি সূর্যাস্তের অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে লোকেরা! তোমরা দুশমনের সাথে মুকাবিলার আকাঙ্ক্ষা করো না বরং নিরাপত্তা লাভের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর। তারপর যখন দুশমনের সাথে মুকাবিলা হয় তখন অবিচল থেকো। আর জেনে রেখো, জান্নাত তরবারির ছায়াতলে অবস্থিত। তারপর তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আপনি কিতাব নাযিলকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী ও দলকে পরাজয়দানকারী, ওদেরকে পরাস্ত করুন এবং আমাদেরকে তাদের ওপর বিজয়ী করুন। (বুখারী ও মুসলিম)


১৩২৬. হযরত সাহল ইবন সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ এমন দু’টি সময় আছে যখন (দু’আ করলে তা) প্রত্যাখান করা হয় না অথবা (বলেছেন) খুব কমই প্রত্যাখান করা হয়। আযানের সময় ও যুদ্ধের সময় যখন পরস্পরের সাথে ঘোরতর যুদ্ধ চলে। (আবু দাঊদ)


১৩২৭. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) যখন লড়াই করতেন, তখন বলতেনঃ হে আল্লাহ! আপনিই আমার বাহু (ভরসাস্থল), আপনিই আমার সাহায্যকারী, আপনার দ্বারাই আমি শক্তি সঞ্চয় করি, আপনারই শক্তির সাহায্যে আমি আক্রমণ করছি এবং আপনারই শক্তিতে লড়াই করছি। (আবু দাঊদ ও তিরমিযী) ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান।


১৩২৮. হযরত আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) যখন কোন জাতি থেকে কোন প্রকার শত্রুতার আশংকা অনুভব করতেন তখন বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমরা আপনাকে তাদের মুকাবিলায় রাখছি এবং আমরা আপনার নিকট তাদের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” (আবু দাউদ সহীহ সনদে)


১৩২৯. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ ঘোড়ার কপালের মধ্যে কিয়ামত পর্যন্ত কল্যাণ সংযুক্ত রয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)


১৩৩০. হযরত উরওয়া আল-বারিকী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) বলেছেনঃ “কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার কপালের সাথে কল্যাণ প্রতিদান ও গনীমত হিসেবে সংযুক্ত রয়েছে।” (বুখারী ও মুসলিম)


১৩৩১. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (জিহাদ করার জন্য) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে তাঁর ওয়াদাকে সত্য মনে করে কোন ঘোড়া প্রতিপালন করে, তার এ ঘোড়ার খাবার, পানীয়, গোবর ও পেশাব কিয়ামতের দিন তার আমলের পাল্লায় (তুলাদণ্ডে) ওযন দেয়া হবে। (বুখারী)


১৩৩২. হযরত আবু মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খেদমত লাগাম লাগানো একটি উটনীসহ এসে বললোঃ এটা আল্লাহর পথে (দেয়া হলো)।  অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ কিয়ামতের দিন এর বিনিময়ে তুমি সাতশ উটনী পাবেন যাদের গলায় লাগাম লাগানো থাকবে। (মুসলিম)


১৩৩৩. হযরত আবু হাম্মাদ-উকবা ইবনে আমির আল জুহানী (রা) থেকে বর্ণিত। তাঁর কয়েকটি ডাকনাম উল্লেখিত হয়েছে। যেমন, আবু সু’আদ, আবু উসাইদ, আবু আমির, আবু আমর, আবুল আসওয়াদ ও আবু আবস। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে মিম্বারের ওপর বলতে শুনেছি, আর তোমরা তাদের অর্থাৎ শত্রুপক্ষের মুকাবিলায় নিজেদের শক্তি সামর্থ অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ কর। জেনে রেখো, শক্তি অর্থ হচ্ছে তীর নিক্ষেপ। জেনে রেখো, শক্তি অর্থ হচ্ছে তীর নিক্ষেপ। জেনে রেখো, শক্তি অর্থ তীর নিক্ষেপ। (মুসলিম)


১৩৩৪. হযরত আবু হাম্মাদ-উকবা ইবনে আমির আল জুহানী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ শীঘ্রই বিভিন্ন এলাকা তোমাদের হাতে বিজিত হবে এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যথেষ্ঠ হবে। কাজেই তোমাদের কেউ যেন তার তীরন্দাজীর খেলা করার ব্যাপারে গড়িমসি না করে। (মুসলিম)


১৩৩৫. হযরত আবু হাম্মাদ-উকবা ইবনে আমির আল-জুহানী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে তীর নিক্ষেপ শেখানো হয়েছে, তারপর সে তা ছেড়ে দিয়েছে, সে আমাদের দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। অথবা (তিনি বলেছেন) সে অবশ্যই নাফরমানী করেছে। (মুসলিম)


১৩৩৬. হযরত আবু হাম্মাদ উকবা ইবনে আমির আল জুহানী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ একটি তীরের বদৌলতে তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। একজন হচ্ছে তীর নির্মাতা, যে তার নির্মাণের সময় কল্যাণের উদ্দেশ্য পোষণ করে। দ্বিতীয়জন হচ্ছে, তীর নিক্ষেপকারী। আর তৃতীয়জন হচ্ছে, যে তীরন্দাজের হাতে তীর তুলে দেয়। (হে লোকেরা)! তীর নিক্ষেপ কর এবং ঘোড়ায় চড়া শেখ! যদি তোমরা তীরন্দাজী শেখ তবে আমার নিকট তা ঘোড়ায় চড়া শেখা অপেক্ষা বেশী প্রিয়। আর যে ব্যক্তি তীরন্দাজী শেখার পর তার প্রতি অনাগ্রহী হয়ে তা ত্যাগ করে, সে আল্লাহর একটি নেয়ামত ত্যাগ করে। অথবা তিনি বলেছেনঃ সে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। (আবূ দাঊদ)


১৩৩৭. হযরত সালামা ইবনুল আক্‌ওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী করীম (সাঃ) একটি দলের নিকট দিয়ে গেলেন, তারা নিজেরা তীরন্দাজী করছিল। তিনি বললেনঃ হে বনী ইসমাঈল! তীর নিক্ষেপ কর, কারণ তোমাদের পিতাও [হযরত ইসমাঈল (আ)] তীর নিক্ষেপকারী ছিলেন।  (বুখরী)


১৩৩৮. হযরত আমর ইবনে আবাসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি তীর নিক্ষেপ করে, তা একটি গোলাম আযাদ করার সমান।

(আবু দাঊদ ও তিরমিযী) ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।


১৩৩৯. হযরত আবু ইয়াহ্‌ইয়া খুরাইম ইবনে ফাতিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কিছু খরচ করলো তা তার জন্য ৭০০ গুণ লেখা হয়। (তিরমিযী)


১৩৪০. হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ যে বান্দাহ আল্লাহর পথে একদিন রোযা রাখে আল্লাহ সে দিনের বিনিময়ে তার চেহারাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে দেন। ( বুখারী ও মুসলিম)


১৩৪১. হযরত আবু উমামা (রা)।  নবী করীম (সা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (জিহাদে) একদিন রোযা রাখে আল্লাহ তার ও জাহান্নামে মধ্যে একটি পরিখা খনন করে দেবেন আর তার দূরত্ব হবে আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। (তিরমিযী) ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।


১৩৪২. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জিহাদ করেনি এবং জিহাদের কোন চিন্তাও তার অন্তরে আসেনি এমন অবস্থায় মারা গেল, তার মৃত্যু হলো নিফাকের (মুনাফেকীর) এক শাখার ওপর। (মুসলিম)


১৩৪৩. হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার এক জিহাদে আমরা নবী করীম (সা)-এর সাথে ছিলাম। (সে সময়) তিনি বললেনঃ মদিনায় এমন কিছু লোক আছে, তোমরা যেখানে সফর কর এবং যে উপত্যকা অতিক্রম কর সর্বত্র তারা তোমাদের সাথে আছে। রোগ তাদেরকে আটকে রেখেছে।

অন্য এক বর্ণনায় আছেঃ “ওযর তাদেরকে আতকে রেখেছে।” ওপর এক বর্ণনায় রয়েছেঃ “তবে তারা তোমাদের সাথে সাওয়াবের ক্ষেত্রে শরীক আছে।” ইমাম বুখারীও হাদীসটিকে হযরত আনাসের বর্ণনায় এবং ইমাম মুসলিম হযরত জাবির থেকে বর্ণনা করেছেন। আর এখানে উদ্ধৃত হাদীসের শব্দগুলো ইমাম মুসলিমের।


১৩৪৪. হযরত আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। জনৈক বেদুঈন নবী করীম (সা)-এর নিকট এসে বললঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! এক ব্যক্তি গনীমাতের মাল লাভ করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে, আরেক ব্যক্তি যুদ্ধ করে এ উদ্দেশ্যে যে, লোকদের মুখে মুখে তার নাম আলোচিত হয়, আরেক ব্যক্তি মধ্যে তার মর্যাদা দেখাবার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে, অন্য এক রেওয়ায়েতে আছেঃ (কেউ) বীরত্ব দেখাবার জন্য যুদ্ধ করে, (কেউ) জাতীয় মর্যাদার জন্য যুদ্ধ করে, আরেক রেওয়ায়েতে আছেঃ (কেউ) যুদ্ধ করে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে -এদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে জিহাদ করছে? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর কালেমাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য যুদ্ধ করে একমাত্র তার যুদ্ধই আল্লাহর পথে জিহাদ হিসেবে গণ্য হবে।”

(বুখারী ও মুসলিম)


১৩৪৫. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ’স (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ এমন কোন সেনাদল বা বাহিনী আল্লাহর পথে জিহাদ করবে না, যারা গনীমাতের মাল লাভ করবে ও নিরাপদ থেকে যাবে কিন্তু তারা তাদের প্রতিদানের দুই তৃতীয়াংশ শীঘ্রই লাভ করবে। আর এমন কোন সেনাদল ও বাহিনী আল্লাহর পথে জিহাদ করবে না, যারা অসফল হবে ও বিপদগ্রস্ত হবে কিন্তু তাদের প্রতিদান (পরকালীন) পুরোপুরি পাবে (অর্থাৎ তারা আখিরাতে পূর্ণ প্রতিদান লাভ করবে।) (মুসলিম)


১৩৪৬. হযরত আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি আরয করলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে দেশ ভ্রমণ করার অনুমতি দিন। নবী করীম (সা) বললেনঃ আমার মহান পরাক্রমশালী আল্লাহর পথে জিহাদ করাই আমার উম্মতের দেশ ভ্রমণ। আবু দাঊদ সহীহ সনদ সহকারে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।


১৩৪৭. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) নবী করীম (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তনও জিহাদের মধ্যে শামিল।” (আবু দাঊদ)


১৩৪৮. হযরত সায়িব ইবনে ইয়াযীদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) যখন তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে এলেন, লোকেরা তাঁর সাথে (সাক্ষাৎ করতে বের হলো এবং) সাক্ষাৎ করল। আমিও ছেলেদের সাথে ‘সানিযাতুল ওয়াদা’য় তাঁকে অভ্যর্থনা জানালাম। (আবু দাঊদ)

সহীহ সনদে এ শব্দাবলী সম্বলিত এ হাদিসটি রেয়ায়াত করেছেন। ইমাম বুখারী এটিকে নিম্নোক্তভাবে বর্ণনা করেছেনঃ সায়্যিব (রা) বলেন, আমি তরুণ ছেলেদের রাসূলুল্লাহ (সা) কে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য “সানিয়াতুল বিদা”য় গেলাম।


১৩৪৯. হযরত আবু উমামা (রা) নবী করীম (সা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জিহাদ করেনি, কোন গাজীকে জিহাদের সরঞ্জামও সংগ্রহ করে দেয়নি এবং কোন গাজীর অনুপস্থিতিতে তার পরিবার-পরিজনদের দেখাশুনাও করেনি, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের পূর্বে তাকে কঠিন বিপদে ফেলে দেবেন।  (আবু দাঊদ)


১৩৫০. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) বলেছেনঃ “তোমাদের ধন-সম্পদ, প্রাণ ও মুখের ভাষা দিয়ে মুশরিকদের সাথে জিহাদ কর।” (আবু দাঊদ)


১৩৫১. হযরত আবু আমর যিনি, আবু হাকীম নামে পরিচিত নু’মান ইবনে মুকাররিন (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (জিহাদে) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে হাযির হলাম। তিনি যখন দিনের প্রথম দিকে যুদ্ধ করতেন না তখন যুদ্ধকে পিছিয়ে দিতেন, এমন কি সূর্য (পশ্চিম গগণে) ঢলে পড়তো এবং বায়ু প্রবাহিত হতে থাকতো আর আল্লাহর সাহায্য আসতো। (আবু দাঊদ ও তিরমিযী) ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।


১৩৫২. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তোমরা শত্রুর সাথে মুকাবিলা করার আকাঙ্ক্ষা করো না। আর যখন তোমাদের শত্রুর সাথে মুকাবিলা হয়েই যায় তখন ধৈর্যের সাথে মুকাবিলা করতে থাকো। (মুসলিম)


১৩৫৩. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) বলেছেনঃ “যুদ্ধ হচ্ছে কৌশল ও চালবাজী।” (বুখারী ও মুসলিম)


 

Was this article helpful?

Related Articles