জুমার দিনের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব

জুমআর জন্য গোসল করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, সকাল সকাল মসজিদে যাওয়া, এ দিনে দুআ করা, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর দরূদ পড়া ও এ দিনের কোন এক সময়ে দুআ কবুল হওয়ার বিবরণ এবং জুমআর পর বেশী বেশী মহান আল্লাহর যিক্‌র করা মুস্তাহাব

আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ

“অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর ও আল্লাহকে অধিকরুপে স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা জুমআহ ১০)

 

১১৪৮. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ উদিত সূর্যের প্রভাদীপ্ত দিনগুলোর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট দিনটি হচ্ছে জুম্মার দিন। এ দিনে আদম (আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এ দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে আর এ দিনেই তাঁকে বের করা হয়েছে জান্নাত থেকে।  (মুসলিম)


১১৪৯. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ভাল করে ওযূ করে জুমু’আর নামাযে আসে, খুতবা শুনে ও নীরবে বসে থাকে, তার সেই জুমু’আ থেকে পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিনদিনের (ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র) পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি কাঁকরে হাত লাগালো সে অনর্থক সময় নষ্ট করলো।   (মুসলিম)


১১৫০. আবু হুরাইরা (রা) নবী করীম (সা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমু’আ থেকে আরেক জুমু’আ এবং এক রমযান থেকে আরেক রমযান, এ সমস্ত তাদের অন্তর্বর্তীকালে যে সব সগীরা গুনাহ হয় তার জন্য কাফফারা হয়ে যায়, যখন সে (সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি) কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম)


১১৫১. হযরত আবু হুরাইরা ও আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়েই রাসূলুল্লাহ (সা) কে তাঁর কাষ্ঠনির্মিত মিম্বরে (বসে) বলতে শুনেছেনঃ লোকদের জুমু’আ ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। অন্যথায় আল্লাহ তাদের অন্তরের ওপর মোহর মেরে দিবেন, তারপর তারা অবশ্যই গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।  (মুসলিম)


১১৫২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমু’আর নামাযের দিকে আসলে তার ভাল করে গোসল করা উচিত।  (বুখারী ও মুসলিম)


১১৫৩. আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ প্রত্যেক বালেগের (প্রাপ্ত বয়স্কের) ওপর জুমু’আর দিন গোসল করা ওয়াজিব বা কর্তব্য।  (বুখারী ও মুসলিম)

মুহতালিম অর্থ ‘বালেগ’ এবং ওয়াজিব অর্থ এখানে স্বেচ্ছামূলক ওয়াজিব (কর্তব্য)।  যেমন কোন ব্যক্তি তার সাথীকে বলে, তোমার অধিকার আদায় করা আমার জন্য ওয়াজিব। আল্লাহ অধিক ভালো জানেন।


১১৫৪. হযরত সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন (জুমু’আর নামাযের জন্য) ওযূ করলো, তাই তার জন্য যথেষ্ট এবং ভালো। আর যে ব্যক্তি গোসল করলো তার গোসলই হলো উত্তম।   (আবু দাঊদ ও তিরমিযী)


১১৫৫. হযরত সালমান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন গোসল করে, নিজের সামর্থ মুতাবিক পবিত্রতা অর্জন করে ও তেল লাগায় অথবা ঘরে রাখা খুশবু মাখে, তারপর (ঘর থেকে) বের হয় এবং (মসজিদে গিয়ে) দু’জন লোককে ফাঁক করে তাদের মাঝখানে বসে না, তারপর তার জন্য যে পরিমাণ (নফল ও সুন্নাত) নামায নির্ধারিত আছে তা পড়ে, তারপর ইমাম যখন খুতবা দেন তখন সে চুপ করে বসে শোনে, তার সমস্ত (সাগীরা) গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেবেন, যা সে সেই জুমু’আ থেকে পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত করে।  (বুখারী)


১১৫৬. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন নাপাকি থেকে পাক হবার যেমন গোসল করা হয় তেমনি ভালভাবে গোসল করে তারপর (প্রথম সময়ে জুমু’আর নামাযের জন্য) মসজিদে যায়, সে যেন একটি উট আল্লাহর পথে কুরবানী করলো। যে ব্যক্তি সময়ে মসজিদে যায়, সে যেন একটি গরু কুরবানী করলো। যে ব্যক্তি তৃতীয় সময়ে যায় সে যেন একটি শিং ওয়ালা মেষ কুরবানী করলো। যে ব্যক্তি চতুর্থ সময়ে যায়, সে যেন একটি মুরগী দান করলো। আর যে ব্যক্তি পঞ্চম সময়ে যায় সে যেন আল্লাহর পথে একটি ডিম দান করলো। যখন ইমাম (তাঁর হুজরা থেকে) বের হন তখন ফিরিশতাগণ উপদেশ শুনার জন্য (মসজিদের দরজা থেকে) হাযির হয়ে যান (এবং দপ্তরে নাম উঠানো বন্ধ হয়ে যায়)।  (বুখারী ও মুসলিম)


১১৫৭. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) জুমু’আর কথা প্রসঙ্গে বললেনঃ এর মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যদি মুসলিম বান্দা সেটি পেয়ে যায় এবং সে নামায পড়তে থাকে, আল্লাহর কাছে সে যদি কিছু চায়, তাহলে আল্লাহ নিশ্চিত তা দেন। এ কথা বলে তিনি স্বীয় হাত দ্বারা ইঙ্গিত করলেন, সে মূহূর্ত টি খুবই সংক্ষিপ্ত। (বুখারী ও মুসলিম)


১১৫৮. আবু বুরদাহ ইবনে আল-আশ’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনে উমর (আমাকে) বলেনঃ তুমি কি তোমার আব্বাকে জুমু’আর (দু’আ কবুলের) সময়ের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছো? তিনি বলেন, আমি বললামঃ হ্যাঁ, আমি তা শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ সেই (দু’আ কবুলের) সময়টি হচ্ছে ইমামের মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে নামায খতম হওয়া পর্যন্ত এ মধ্যবর্তীকালীন সময়টি। (মুসলিম)


১১৫৯. হযরত আওস ইবনে আওস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমু’আর দিন। অতএব তোমরা সেদিন আমার ওপর বেশি করে দরূদ পাঠ করবে। কারণ তোমাদের দরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়।   (আবু দাঊদ)


 

Was this article helpful?

Related Articles