ইল্‌ম-জ্ঞান-প্রজ্ঞার মর্যাদা ও গুরুত্ব

জ্ঞান পর্ব

ইল্‌ম-জ্ঞান-প্রজ্ঞার মর্যাদা ও গুরুত্ব

আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ

“এবং বল, হে আমার প্রভু! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দাও।” (সূরা তা-হাঃ ১১৪)

তিনি আরো বলেছেনঃ

“বল, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হয়।” (সূরা যুমারঃ ৯)

তিনি আরো বলেছেনঃ

“তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছেন।” (সূরা মুজাদিলাঃ ১১)

তিনি আরো বলেছেনঃ

“আল্লাহকে একমাএ তারাই ভয় করে যারা (তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের) জ্ঞান রাখে।” (সূরা ফাতির  ঃ ২৮)

 

১৩৭৬. হযরত মু’আবিয়া (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “মহান আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের সূক্ষ্ণজ্ঞান দান করেন।” (বুখারী ও মুসলিম)


১৩৭৭. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ দু’ব্যক্তি ব্যতীত আর কারোর ওপর ঈর্ষা করার অধিকার নেই। এক ব্যক্তি হচ্ছেঃ যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তারপর তাকে ঐ ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করার তাওফীক দান করেছেন। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি হচ্ছেঃ যাকে আল্লাহ (দ্বীনের) জ্ঞান দান করেছেন, সে সেই অনুযায়ী ফায়সালা করে এবং লোকদেরকে তা শেখায়। (বুখারী ও মুসলিম)


১৩৭৮. হযরত আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ আমাকে যে ইলম ও হিদায়াত দান করে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে একটি বারিধারার মতো যা একটি যমীনের ওপর বর্ষিত হয়েছে, তার কিছু অংশ ভালো, ফলে তা পানি গ্রহণ করে নিয়েছে। সেখানে বিপুল পরিমাণ গাছ ও ঘাস উৎপন্ন করেছে। এর একটি অংশ ছিল নীচু শিলাভূমি। সেখানে সে পানি আটকে নিয়েছে। আর এ থেকে আল্লাহ লোকদেরকে উপকৃত করেছেন। তা থেকে তারা পান করেছে এবং পানি সেচ করে ফসল উৎপন্ন করেছে। আবার এই বারিধারা এমন এক অংশে পৌঁছেছে, যেটি ছিল অনুর্বর সমতল মাঠ। সেখানে সে পানি ধরে রাখতে পারেনি এবং তার ঘাস উৎপাদন করার ক্ষমতাও নেই। কাজেই এটি হচ্ছে এমন এক ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে আল্লাহর দীনের সূক্ষ্ণজ্ঞান লাভ করেছে এবং আল্লাহ আমাকে যে জ্ঞান দিয়ে পাঠিয়েছেন তা থেকে সে লাভবান হয়েছে, কাজেই সে তা শিখেছে এবং অন্যকে শিখিয়েছে। আর অপর দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন এক ব্যক্তির যে এই জ্ঞানের দিকে দৃষ্টি দেয়নি এবং আল্লাহ আমাকে যে হিদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন তা গ্রহণ করেনি। (বুখারী ও মুসলিম)


১৩৭৯. হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) আলী (রা)-কে বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! তোমার মাধ্যমে আল্লাহ যদি একজন লোককেও হিদায়াত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য লাল উটগুলো থেকেও উত্তম। (বুখারী ও মুসলিম)


১৩৮০. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আমার নিকট থেকে একটি বাক্য হলেও তা লোকদের নিকট পৌঁছিয়ে দাও। আর বনী ইসরাইলদের থেকে ঘটনাবলী উদ্বৃত কর, এতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, সে অবশ্যই জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নিবে। (বুখারী)


১৩৮১. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করার জন্য কোন পথে চলে (এর বিনিময়ে) মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের দিকে যাবার পথ সহজ করে দেন।”   (মুসলিম)


১৩৮২. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হিদায়াতের দিকে আহ্বান করেছে (তার আহ্বানের ফলে) যারা তার হিদায়াতের অনুসরণ করেছে সে ব্যক্তি তাদের সমান প্রতিদান পাবে। এক্ষেত্রে হিদায়াত প্রাপ্তদের পথ অবলম্বনকারীদের প্রতিদান থেকে কোন কমতি হবে না। (মুসলিম)


১৩৮৩. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “আদম সন্তান যখন মারা যায়, তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। তিনটি আমলের সাওয়াব জারী থাকে। (১) সাদাকায়ে জারীয়া, (২) এমন ইলম যা থেকে লাভবান হওয়া যায় এবং (৩) সুসন্তান যে তার জন্য দু’আ করে।” (মুসলিম)


১৩৮৪. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ দুনিয়া অভিশপ্ত এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে সেগুলোও অভিশপ্ত। তবে অভিশপ্ত নয় কেবল আল্লাহর যিকর ও তাঁর আনুগত্য এবং আলিম ও ইলম হাসিলকারী। (তিরমিযী) ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান।


১৩৮৫. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি ইলম হাসিল (জ্ঞান লাভ) করার উদ্দেশ্যে বের হয় সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর পথে (জিহাদে) অবস্থান করে।”  (তিরমিযী)


১৩৮৬. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ “কল্যাণ (দ্বীনের ইলম) কখনো মু’মিনকে পরিতৃপ্ত করতে পারবে না, অবশেষে জান্নাতে এর পরিসমাপ্তি ঘটবে।”    (তিরমিযী)


১৩৮৭. হযরত আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আবিদের (ইবাদতকারীর) ওপর আলিমের (জ্ঞানীর) শ্রেষ্ঠত্ব ঠিক তেমনি পর্যায়ের যেমন তোমাদের একজন সাধারণ মুসলমানের ওপর আমার শ্রেষ্ঠত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ যারা লোকদেরকে দীনের ইলম শেখায় আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ এবং পৃথিবী ও আকাশের অধিবাসীবৃন্দ এমন কি গর্তে অবস্থানকারী পিঁপড়া, এমনকি মাছেরাও তাদের জন্য দু’আ করে। (তিরমিযী)


১৩৮৮. হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করার জন্য পথ অতিক্রম করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে যাবার পথ সহজ করে দেন। আর ফিরিশতারা তালেবে ইলমদের (ইলম অর্জনরত ছাত্রদের) জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেয়। আর আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে এমনকি পানির মাছও আলিমের মাগফিরাতের জন্য দু’আ করে। আর আবিদের (ইবাদতকারীর) ওপর আলিমের শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে সমগ্র তারকামণ্ডলীর ওপর চাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের মতো। অবশ্য আলিমগণ হচ্ছেন, নবীদের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ তাঁদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে দিরহাম ও দীনার রেখে যান না। তবে তাঁদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ইলম (জ্ঞান) রেখে যান। কাজেই যে ব্যক্তি তা আহরণ করেছে সে পুরো অংশই লাভ করেছে। (আবু দাঊদ ও তিরমিযী)


১৩৮৯. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে যেন তরতাজা করে দেন, যে আমাদের থেকে কিছু শুনেছে, তারপর সেটা পৌঁছে দিয়েছে অন্যের নিকট যেমন শুনেছে ঠিক তেমনিই। আর অনেক লোকই এমন হয় যাদেরকে (হাদীস) পৌঁছানো হয় তারা অধিক সংরক্ষণকারী হয় শ্রোতার তুলনায়। (তিরমিযী)


১৩৯০. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে দীনের কোন ইলম (ইসলামের জ্ঞান-বিজ্ঞান) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় এবং সে (জানা সত্ত্বেও) তা গোপন রাখে, তাকে কিয়ামতের দিন আগুনের লাগাম পরানো হবে। (আবু দাঊদ ও তিরমিযী) ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান।


১৩৯১. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “যে ইলমের সাহায্যে মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, সে ইলম যে ব্যক্তি কেবলমাত্র দুনিয়ার কোন স্বার্থোদ্ধারের উদ্দেশ্যে অর্জন করে, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবে না।” (আবু দাঊদ সহীহ সনদে)


১৩৯২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ ইলম (দীনি জ্ঞান) এমনভাবে উঠিয়ে নেবেন না যেমনভাবে লোকদের থেকে তাকে ছিনিয়ে নেয়া হয় বরং উলামায়ে কিরামের ইন্তিকালের মাধ্যমে তিনি ইলমকে উঠিয়ে নিবেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত একজন আলিমও বেঁচে থাকবেন না। তখন লোকেরা জাহিলদেরকে নিজেদের ইমাম-নেতা বানিয়ে নেবে। তাদের নিকট মাসয়ালা-মাসাইল জিজ্ঞেস করা হবে এবং তারা ইলম ব্যতীতই ফতওয়া (ফায়সালা) দিবে। এভাবে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং লোকদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে। (বুখারী ও মুসলিম)


 

Was this article helpful?