সাদা কাপড় পরা মুস্তাহাব; লাল, সবুজ, হলুদ ও কালো রংয়ের কাপড় জায়িয, রেশমী ব্যতীত সুতী, উলী, পশমী ইত্যাদি কাপড় পরিধান করার বর্ণনা

সাদা কাপড় পরা ভাল, লাল, সবুজ, হলুদ ও কালো রংয়ের কাপড় পড়া জায়েয, রেশম ছাড়া সুতী, উল পশমী ইত্যাদি যাবতীয় কাপড় পরিধান করা জায়েয

আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ

“হে আদম সন্তান, আমি তোমাদের জন্য পোশাক নাযিল করেছি। যেন তোমাদের দেহের লজ্জাস্থান সমূহকে ঢাকতে পার। এটা তোমাদের জন্য দেহের আচ্ছাদন ও শোভা বর্ধনের উপায়ও। আর সর্বোত্তম পোশাক হচ্ছে তাকওয়ার পোশাক।” (সূরা আরাফঃ ২৬)

তিনি আরো বলেছেনঃ

“তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন বস্ত্রের, যা তোমাদের তাপ থেকে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেন তোমাদের জন্য বর্মের যা তোমাদের যুদ্ধের সময় রক্ষা করে।” (সূরা নাহলঃ ৮১)

 

৭৭৯. ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তোমরা সাদা রং-এর কাপড় পরিধান করো। কারণ তোমাদের কাপড়গুলোর মধ্যে এটাই সর্বোত্তম। সাদা কাপড়েই তোমাদের মৃতদের কাফন দেবে।

ইমাম আবু দাঊদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।


৭৮০. সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তোমরা সাদা পোশাক পর। কারণ এটাই পবিত্র ও উৎকৃষ্টতর। সাদা কাপড়েই তোমাদের মৃতদের কাফন দেবে।

ইমাম নাসাঈ ও হাকেম হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। হাকেম বলেন, এ হাদীসটি সহীহ।


৭৮১. বারা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর গঠনাকৃতি ছিল মধ্যম গোছের। আমি তাঁকে লাল চাদর গায়ে জড়ানো অবস্থায় দেখেছি। আমি (দুনিয়াতে) তাঁর চাইতে আর কোন সুন্দর জিনিস দেখিনি। (বুখারী, মুসলিম)


৭৮২. আবু জুহাইফা ওয়াহব ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে মক্কায় আবাতাহ নামক স্থানে চামড়ার একটি লাল তাঁবুতে দেখেছি। বিলাল (রা) তাঁর জন্য উযুর পানি নিয়ে এলেন। কিছু সংখ্যক লোক রাসূলুল্লাহ (সা)-এর পানির কিছু অংশ তো পেয়ে গেলেন এবং কেউ শুধু অন্যদের ভিজা হাতের স্পর্শ লাভ করলেন। নবী (সা) লাল চাদর গায়ে জড়ানো অবস্থায় (তাঁবু) থেকে বেরিয়ে এলেন। আমি যেন তাঁর উভয় হাঁটুর নিম্নদেশের শুভ্রতা দেখতে পাচ্ছি। তিনি উযু করলেন। বিলাল আযান দিলেন। আমি তাঁর মুখ এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। তিনি তখন ডানে ও বাঁয়ে ‘হাইয়্যা‌ আলাস সালাহ্, হাইয়্যা আলাল ফালাহ্’ বলছিলেন। এরপর তাঁর সামনে একটি বর্শা ফলক গেড়ে দেয়া হল। তিনি সামনে অগ্রসর হয়ে নামায পড়ালেন এবং তাঁর সামনে দিয়ে কুকুর ও গাধা অতিক্রম করল কিন্তু বাধা প্রদান করা হয়নি।  (বুখারী, মুসলিম)


৭৮৩. আবু রিমসা রিফ’আ আত-তাইমী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে দু’টি সবুজ কাপড় পরিহিত দেখেছি।

ইমাম আবু দাঊদ ও ইমাম তিরমিযী সহীহ সনদে এটি রিওয়ায়াত করেছেন।


৭৮৪. জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সা) একটি কালো রং-এর পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় (মক্কায়) প্রবেশ করলেন। (মুসলিম)


৭৮৫. আবু সাঈদ আমর ইবনে হুরাইস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসূলুল্লাহ (সা) কে তাঁর মাথায় কালো রং-এর পাগড়ী পরিহিত দেখতে পাচ্ছি, যার উভয় কিনারা তাঁর দুই কাঁধে ঝুলে রয়েছে।

ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাঁর আরেক বর্ণনায় রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ (সা) জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তখন তিনি কালো রং-এর পাগড়ী পরিহিত ছিলেন।


৭৮৬. আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) কে তিনটি সাদা সূতী কাপড় দ্বারা কাফন দেয়া হয়েছে। তাতে কামিস ও পাগড়ী ছিল না। (বুখারী, মুসলিম)


৭৮৭. আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ভোরে রাসূলুল্লাহ (সা) কালো পশমে তৈরি চাদর গায়ে জড়িয়ে বের হলেন। তাতে উটের পিঠের হাওদার নকশা অংকিত ছিল। (মুসলিম)


৭৮৮. মুগীরা ইবনে শোবা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সফরসঙ্গী ছিলাম। তিনি আমাকে বলেনঃ তোমার সাথে কি পানি আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ (আছে)।     তিনি সওয়ারী থেকে নামলেন এবং একদিকে পায়ে হেঁটে রওয়ানা করলেন, এমনকি তিনি রাতের আঁধারে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি এলেন। আমি পাত্র থেকে তাঁকে পানি ঢেকে দিলাম। তিনি মুখমণ্ডল ধুলেন। তিনি একটি পশমী জুব্বা পরিহিত ছিলেন। তিনি তার মধ্যে থেকে তাঁর হাত দু’টি বের করতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। অবশেষে জুব্বার নীচ দিয়ে হাত বের করলেন, তারপর উভয় বাহু ধুলেন ও মাথা মাসেহ করলেন। ্‌আমি তাঁর মোজা খোলার জন্য হাত বাড়ালাম। তিনি বললেনঃ ছেড়ে দাও, আমি ওগুলো পবিত্র অবস্থায় পায়ে পরেছি। তারপর তিনি উভয় মোজার উপর মাসেহ করলেন।

অন্য বর্ণনায় আছেঃ তিনি সংকীর্ণ অস্তিন বিশিষ্ট সিরীয় জুব্বা পরিহিত ছিলেন। আর এক বর্ণনায় আছেঃ এ ঘটনা তাবুক যুদ্ধের সময় সংঘটিত হয়েছিল।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিস হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন।


 

Was this article helpful?

Related Articles