যিক্‌রের সমাবেশের গুরুত্ব এবং সর্বদা তার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকা মুস্তাহাব আর বিনা ওজরে এ ধরনের সমাবেশ হতে পৃথক হয়ে যাওয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা

যিক্‌রের মজলিসের ফযীরত এবং সর্বদা তার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকা মুস্তাহাব আর বিনা ওজরে এ ধরনের সমাবেশ হতে আলাদা হয়ে যাওয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা

আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ

“আর তুমি নিজেকে তাদের সাথে আবদ্ধ রাখ যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের প্রভুর ইবাদত করে কেবল মাত্র তাঁর সন্তষ্টি অর্জনের জন্য। আর তোমার দৃষ্টি তাদের উপর থেকে সরিয়ে নিয়ো না।” (সূরা কাহাফঃ ২৮)

 

১৪৪৮. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ আল্লাহর একদল ফিরিশতা আছে, তাঁরা পথে পথে আল্লাহর যিকররত লোকদেরকে খুঁজে বেড়ায়। যখন তাঁরা মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহর স্মরণরত একদল লোককে পেয়ে যায়, নিজের সাথীদেরকে ডেকে বলেঃ তোমাদের প্রয়োজনের দিকে চলে এসো। তখন (ফিরিশতারা চলে আসে) নিজেদের ডানার সাহায্যে তাঁরা দুনিয়ার আকাশ পর্যন্ত ঐ যিকিরকারীদের ঢেকে নেয়। তাঁদের রব তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করেন, অথচ তিনি সর্বাপেক্ষা বেশি জ্ঞাতঃ আমার বান্দারা কি বলছে? রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ফিরিশতাগণ জবাব দেনঃ তারা আপনার পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন, আপনার প্রশংসায় মশগুল রয়েছে এবং আপনার মহান মর্যাদা বর্ণনা করছে। আল্লাহ জিজ্ঞেস করেনঃ তারা কি আমাকে দেখেছে? ফিরিশতাগণ জবাব দেয়ঃ না, আল্লাহর কসম! তারা আপনাকে দেখেনি। মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা যদি আমাকে দেখতো তাহলে? হুযুর (সা) বলেনঃ ফিরিশতাগণ বললেনঃ যদি তারা আপনাকে দেখতে পেতো, তাহলে আপনার অনেক বেশি ইবাদত করতো, আপনার অনেক বেশি শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতো এবং অনেক বেশি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করতো। মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা কি চায়? রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ফিরিশতাগণ বললেনঃ তারা আপনার নিকট জান্নাত চায়। মহান আল্লাহ জিজ্ঞেস করেনঃ তারা কি জান্নাত দেখেছে? তিনি বলেন, ফিরিশতাগণ জবাব দেন, না, আল্লাহর কসম, হে আমাদের রব! তারা জান্নাত দেখেনি। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ জিজ্ঞেস করেনঃ যদি তারা তা দেখে নিতো, তাহলে? তিনি বলেন, ফিরিশতাগণ জবাব দেনঃ যদি তারা জান্নাত দেখতো, তাহলে তাদের জান্নাতের লোভ, জান্নাতের আকাঙ্ক্ষা ও তার প্রতি আকর্ষণ আরো বেশি বেড়ে যেতো। মহান আল্লাহ জিজ্ঞেস করেনঃ তারা কোন জিনিস থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছে? তাঁরা বলেনঃ তারা জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, মহান আল্লাহ জিজ্ঞেস করেনঃ তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? তিনি বলেন, ফিরিশতাগণ জবাব দেন, না, আল্লাহর কসম, তারা জাহান্নাম দেখেনি। তখন মহান আল্লাহ জিজ্ঞেস করেনঃ যদি তারা জাহান্নাম দেখতো, তাহলে? তারা জবাব দেন, যদি তারা জাহান্নাম দেখতো তাহলে আরো বেশি দূরে ভাগতো এবং তার ভয়ে আরো বেশি ভীত হতো। তিনি বলেন, তখন মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম। তিনি বলেন, একথা শুনে ফিরিশতাদের একজন বলেঃ এদের মধ্যে অমুক ব্যক্তি আসলে এদের দলের অন্তর্ভুক্ত নয়, সে কোন প্রয়োজনে এসে পড়েছে। আল্লাহ বলেনঃ এরা এমন মজলিসের সাথে সংশ্লিষ্ট যার সাথে সংশ্লিষ্ট লোকদেরকে বঞ্চিত করা হয় না। (বুখারী ও মুসলিম)

তবে মুসলিমের বর্ণনায় আবু হুরাইরা (রা) থেকে উল্লেখিত হয়েছে, রাসূল (সা) বলেনঃ আল্লাহর ফেরেশতাগণের একটি দল বেশ ঘোরাফেরার মধ্যে থাকেন। এ দলটি আল্লাহর স্মরণের মজলিসগুলো সন্ধান করে ফিরেন। যখন তারা এমন কোন মজলিসের সন্ধান পান তখন তারাও তাদের সাথে বসে যান এবং তারা পরস্পরের ডানার সাহায্যে পরস্পরকে ঘিরে নেয়, এমনকি এভাবে তাদের দুনিয়ার ও আকাশের মধ্যবর্তী সমস্ত জায়গা ভরে যায়। এরপর যখন আল্লাহর স্মরণকারীদের মজলিস ভেঙ্গে যায়, তারা পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যান এবং এ ফেরেশতাগণ আকাশে উঠে যান তখন মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, অথচ তিনি সবচেয়ে বেশি জানেন, তোমরা কোথা থেকে এসেছো? তারা জবাব দেন, আমরা এসেছি দুনিয়ায় এমন সব বান্দাদের কাছ থেকে যারা আপনার পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করছে এবং আপনার তাওহীদ বাণী উচ্চারণ করছে, আপনার প্রশংসাগীতি গাইছে ও আপনার কাছে প্রার্থনা করছে। আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, তারা আমার কাছে কি প্রার্থনা করছে? ফেরেশতাগণ জবাব দেন, তারা আপনার কাছে আপনার জান্নাতের প্রার্থনা করছে। আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, তারা কি আমার জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতাগণ জবাব দেন, না। হে আমার রব! আল্লাহ বলেন, যদি তারা আমার জান্নাত দেখতো তাহলে তাদের কি অবস্থা হতো? ফেরেশতাগণ বলেন, তারা আপনার কাছে আশ্রয়ও চেয়েছে। তিনি বলেন, তারা কিসের থেকে আমার কাছে আশ্রয় চাইছে? ফেরেশতাগণ জবাব দেন, হে আমাদের রব! তারা আপনার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাইছে। আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, তারা কি আমার জাহান্নাম দেখেছে? তারা জবাব দেন, না দেখেনি। তিনি বলেন, যদি তারা আমার জাহান্নাম দেখতো তাহলে তাদের কী অবস্থা হতো? ফেরেশতাগণ আবার বলেন, তারা আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছে। আল্লাহ বলেন, আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম এবং তারা যা চেয়েছে তা তাদেরকে দান করলাম এবং যা থেকে তারা আশ্রয় চেয়েছে তা থেকে তাদেরকে আশ্রয়ও দিলাম। রাসূল (সা) বলেন, ফেরেশতাগণ বলেন, হে রব! তাদের মধ্যে অমুক ব্যক্তিও ছিল, সে মহাপাপী, সে ওখান দিয়ে যাচ্ছিল, যেতে মজলিসে বসে পড়েছিল। আল্লাহ জবাব দেন, আমি তাকেও মাফ করে দিলাম। (কারণ) এরা এমন একটি দল যার কাছে উপবেশনকারীকেও বঞ্চিত করা হয় না।


১৪৪৯. হযরত আবু হুরাইরা ও আবু সাঈদ (রা) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ এমন কোন দল নেই যারা আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকে এবং ফিরিশতারা তাদেরকে ঘিরে নেয় না। তাদেরকে আল্লাহর রহমত দিয়ে ঢেকে দেন এবং তাদের ওপর শান্তি বর্ষণ করেন আর আল্লাহ তাঁর নিকটস্থদের সাথে এ স্মরণকারীদের কথা আলোচনা করেন। (মুসলিম)


১৪৫০. হযরত আবু ওয়াকিদিল হারিস ইবনে আউফ (রা) থেকে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা) লোকদেরসহ মসজিদে বসেছিলেন, এমন সময় তিনজন লোক সেখানে এসে উপস্থিত হলো। তাদের মধ্য থেকে দু’জন রাসূলুল্লাহ (সা) এর সান্নিধ্যে গেল এবং একজন চলে গেলো। এরা দু’জন রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে দাঁড়িয়ে রইলো। এদের একজন মজলিসের মধ্যে একটি ফাঁকা স্থান পেয়ে তাতে বসে পড়লো। দ্বিতীয় জন তাদের পেছনে বসল। আর তৃতীয় জন মুখ ফিরিয়ে সেখানে থেকে চলে গেলো। রাসূলুল্লাহ (সা) যখন অবসর হলেন, তখন বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে ঐ তিনজন লোক সম্পর্কে জানাবো? তাদের একজন আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করেছে। ফলে মহান আল্লাহ তাকে আশ্রয় দান করেছেন। দ্বিতীয়জন (ভীড়ের মধ্যে প্রবেশ করতে) লজ্জা অনুভব করেছে। অতএব মহান আল্লাহও তার সাথে লজ্জাপূর্ণ ব্যবহার করেছেন। আর তৃতীয় জন মুখ ফিরিয়ে চলে গিয়েছে কাজেই আল্লাহও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।  (বুখারী ও মুসলিম)


১৪৫১. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হযরত মু’আবিয়া (রা) মসজিদের একটি মজলিসের কাছে পৌঁছলেন। অতঃপর বললেনঃ “তোমরা এখানে বসে আছো কেন?” লোকেরা উত্তর দিলোঃ “আমরা এখানে বসে আল্লাহর যিকর করছি।” তিনি বললেনঃ “আল্লাহর কসম! ঐটি ছাড়া আর কোন কিছুই তোমাদেরকে এখানে বসে রাখেনি? তারা বললোঃ “আমরা কেবল ঐ উদ্দেশ্যেই এখানে বসে আছি।” তিনি বললেনঃ “জেনে রেখো, আমি কোন দোষারোপ করার উদ্দেশ্যে তোমাদের কাছ থেকে কসম চাইনি এবং রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে আমার থেকে কম সংখ্যক হাদীসও কেউ বর্ণনা করেনি। নিশ্চিত রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সাহাবীগণের একটি মজলিসের নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ তোমরা কেন বসে আছো? তারা জবাব দিলোঃ আমরা বসে আল্লাহর যিকর করছি, তাঁর প্রশংসা করছি এজন্য যে, তিনি আমাদের ইসলামের পথ দেখিয়েছেন এবং আমাদের প্রতি ইহসান করেছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! এতদ্ব্যতীত আর কোন উদ্দেশ্যে তোমরা এখানে বসোনি? তারা বললোঃ আল্লাহর কসম! এতদ্ব্যতীত আর কোন উদ্দেশ্যে আমরা এখানে বসিনি। তিনি বললেনঃ আমি কোন দোষারোপের কারণে তোমাদেরকে কসম দিইনি। বরং হযরত জিবরীল (আ) আমার নিকট এসে জানালেন যে, আল্লাহ ফিরিশতাগণের সাথে তোমাদের সম্পর্কে গর্ব করেছেন। (মুসলিম)


 

Was this article helpful?

Related Articles