মৃতের জন্য বিলাপ করা হারাম। মৃতের জন্য বিলাপ করে ক্রন্দন করা, মুখে চপেটাঘাত করা, জামার বুক চিড়ে ফেলা, মাথা মুড়ে ফেলা, বিপদ-আপদ আহবান করা ইত্যাদি কাজ নাজায়েয

১৬৫৯. হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (স) ইরশাদ করেছেন, মৃতের জন্যে যে বিলাপ করা হয় এর জন্য তাকে কবরে শাস্তি দেয়া হয়।” (বুখারী )


১৬৬০. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বিপদের সময় নিজের মুখে চপেটাঘাত করবে, বুকের বস্ত্র ছিড়ে মাতম করবে এবং অজ্ঞতার যুগের লোকদের ন্যায় বাক্যালাপ করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (বুখারী ও মুসলিম)


১৬৬১. হযরত আবু বুরদা (রা) বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদিন আবু মুসা (রা) কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মাঝে মাঝে বেহুঁশ হয়ে পড়ছিলেন। তাঁর পরিবারের এক মহিলার কোলে তাঁর মাথা রাখা ছিল। স্ত্রীলোকটি চিৎকার করে ক্রন্দন করছিল। তাকে কিছু বলার মতো শক্তি আবু মূসার ছিলো না। যখন কিছুটা হুঁশ ফিরে আসল তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (স) যার প্রতি অসন্তুষ্ট আমিও তার প্রতি অসন্তুষ্ট। যে নারী চিৎকার করে বিপদে মাথার চুল মুণ্ডন করে এবং পরিধেয় বস্ত্র ছিড়ে ফেলে, তার প্রতি রাসূলুল্লাহ (স) অসন্তুষ্ট ছিলেন। ( বুখারী ও মুসলিম )

‘আসসালিকা’ অর্থঃ যে নারী মৃতের জন্য উচ্চস্বরে বিলাপ করে।
‘আল-হালিকা’ অর্থঃ যে নারী বিপদের সময় মাথার চুল মুণ্ডন করে।
‘আশ-শাককাহ’ অর্থঃ যে নারী বিপদের সময় বুকের বস্ত্র টেনে ছিড়ে ফেলে।


১৬৬২. হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে ক্রন্দন করা হয় তাকে ওই ক্রন্দনের জন্য কেয়ামত পর্যন্ত শাস্তি দেয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)


১৬৬৩. হযরত উম্মে আতিয়া নুসাইবা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, বাইয়াত গ্রহণের সময় মৃতের জন্য বিলাপ করে ক্রন্দন না করার জন্য রাসূলুল্লাহ (স) আমাদের কাছ হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন। ( বুখারী ও মুসলিম)


১৬৬৪. হযরত নু’মান ইবনে বাশীর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একবার আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা) অসুস্থতার কারণে বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। তার বোন ক্রন্দন আরম্ভ করল এবং বলতে লাগল, হে পাহাড় আফসোস! এবং হে এরূপ, হে সেরূপ অর্থাৎ বৈশিষ্ট বর্ণনা করছিল। হুঁশ ফিরে আসলে তিনি তার বোনকে বললেন, তুমি যা কিছু বলেছ সে সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তুমি কি সত্যিই এরূপ? (বুখারী)


১৬৬৫. হযতর আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একবার সা’দ ইবনে ওবাদা (রা) রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ (স), আবুদর রহমান ইবনে আওফ সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস এবং আবদুল্লাহ ইবনে মাসউস (রা) কে সাথে নিয়ে তাঁকে দেখতে গেলেন। তাঁরা তাঁকে বেহুঁশ অবস্থায় দেখলেন। রাসূলুল্লাহ (স) জিজ্ঞেস করলেন, মারা গেছে কি? লোকেরা বলল, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ (স)! তখন রাসূলুল্লাহ (স) ক্রন্দন করতে লাগলেন। নবী করীম (স) কে কাঁদতে দেখে লোকজনও কাদঁতে লাগল। তিনি বললেন, তোমার কি শুনবে না? নিশ্চয়ই আল্লাহ চোখের পানি ও অন্তরের ব্যথা-বেদনার জন্য শাস্তি দিবেন না। বরং এর জন্য শাস্তি দিবেন। অথবা এর কারণে করুণা করবেন। এ বলে তিনি জিহবার দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন। (বুখারী ও মুসলিম)


১৬৬৬. হযরত আবু মালেক আশয়ারী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, (মৃতের জন্য) বিলাপ করা ক্রন্দনকারিণী মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করলে কেয়ামতের দিন তাকে আলকাতরার তৈরি কামিস এবং দস্তার তৈরি চাদর পরিধান করিয়ে উঠানো হবে। ( মুসলিম)


১৬৬৭. হযরত উসাইদ ইবনে আবু উসাইদ তাবেয়ী বাইয়াতকারিণী কোন একজন মহিলা কর্তৃক বর্ণনা করেছিল। উক্ত মহিলা বলেছেন, উত্তম কাজ করা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (স) আমাদের কাছ হতে যে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন, তার মধ্যে ছিল যে আমরা যেন এ বিষয়ে অর্থাৎ মারূফ বা উত্তম কর্মে তাঁর নাফরমানী না করি, খামচিয়ে চোহারা রক্তাক্ত না করি, ধ্বংস বা বিপদ নাই চাই, বুকের বস্ত্র না ছিড়ে ফেলি এবং মাথার চুল যেন না ছিঁড়ি। ( আবু দাউদ )


১৬৬৮. হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, কোন লোক মারা গেলে ক্রন্দনকারীরা তার জন্য হায়রে পাহাড়! হায়রে নেতা ইত্যাদি বলে ক্রন্দন করে। তখন ঐ মৃতের জন্য দু’জন ফেরেশতা নিয়োজিত করা হয়। তারা তাতে ঘুষি মারে আর বলে, তুমি সত্যিই এমন ছিলে। ( তিরিমিযী )


১৬৬৯. হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, লোকদের মধ্যে দু’টি স্বভাব কুফরী হিসেবে গণ্য। (সে দু’টি হলো,) একটি হলো কারো বংশে অপবাদ আরোপ করা বা বংশকূলে গালি দেয়া আর অপরটি হলো মৃতের জন্য বিলাপ করে ক্রন্দন করা। (মুসলিম)


 

Was this article helpful?

Related Articles