আল্লাহর উপর আশাবাদ ব্যক্ত করার বিবরণ।

[Note: কুরআনের আয়াত গুলো পরে আপডেট করা হবে]

 

৪১২. উবাদা ইবনুস সামিত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি এক এবং তাঁর কোন শরীক নেই, মুহাম্মদ তাঁর বান্দাহ ও রাসূল এবং তাঁরই একটি বাক্য (হুকুম) যা তিনি মারইয়ামের প্রতি প্রদান করেন এবং তাঁরই পক্ষ থেকে দেয়া একটি আত্মা, জান্নাত সত্য, জাহান্নামও সত্য, তাহলে আল্লাহ তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন, সে যে কোন আমলই করুক।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছেঃ যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।


৪১৩. আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেনঃ যে ব্যক্তি একটি সৎ কাজ করবে, সে এর দশ গুণ অথবা অধিক সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি একটি অন্যায় করবে, সে তেমনি একটি অন্যায়ের শাস্তি পাবে অথবা আমি মাফ করে দেবো। যে ব্যক্তি আমার এক বিঘত নিকটবর্তী হবে, আমি তার এক হাত নিকটবর্তী হবো; যে ব্যক্তি আমার এক হাত নিকটবর্তী হবে, আমি তার দুই হাত নিকটবর্তী হবো। যে ব্যক্তি হেঁটে হেঁটে আমার কাছে আসবে আমি দৌড়ে তার কাছে যাবো। যে ব্যক্তি পৃথিবী সমান গুনাহ নিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করবে, অথচ সে আমার সাথে কোন কিছু শরীক করেনি, আমি তার সাথে অনুরূপ (পৃথিবীভর্তি) ক্ষমা নিয়ে সাক্ষাত করবো।

ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়েত করেছেন।


৪১৪. জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুঈন নবী (সা)-এর কাছে এসে বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! অবধারিত বিষয় দু’টি কি কি? তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যায়, সে জান্নাতে যাবে এবং যে ব্যক্তি তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করে মারা যায় সে জাহান্নামে যাবে।

ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।


৪১৫. আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা)-এর বাহনে তাঁর পেছনে বসা ছিলেন মু’আয (রা)।  তিনি বলেনঃ হে মু’আয! মু’আয (রা) বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার খেদমতে উপস্থিত আছি। তিনি আবার বলেনঃ হে মু’আয! মু’আয (রা) বলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার পাশেই, আপনার  সৌভাগ্যবান পরশেই হাযির আছি। তিনি পুনরায় বলেনঃ হে মু’আয! মু’আয (রা) এবারও বলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার খেদমতে উপস্থিত। এরূপ তিনবার বলার পর তিনি বলেনঃ যে কোন ব্যক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দাহ ও রাসূল, আল্লাহ তাঁর জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি কি এ ব্যাপারে মানুষকে অবহিত করবো না যাতে তারা সুসংবাদ গ্রহণ করতে পারে? তিনি বলেনঃ (না) তাহলে তারা এটার উপর নির্ভর করে বসে থাকবে। অতঃপর মু’আয (রা) জানা বিষয় গোপন করার গুনাহর ভয়ে তাঁর মৃত্যুর সময় এ ব্যাপারে জানিয়ে দেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।


৪১৬. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত অথবা আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। (রাবীর সন্দেহ, তবে সাহাবীদের মধ্যে সন্দেহ থাকলে কোন ক্ষতি নেই, কেননা তাদের প্রত্যেকেই ন্যায়নিষ্ঠ।) তিনি বলেন, তাবুক যুদ্ধের সময় মুসলিম বাহিনীতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। তারা বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি অনুমতি দিলে আমরা আমাদের উট যবেহ করে খেতে পারি, চর্বি দিয়ে তেলও বানাতে পারি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ ঠিক আছে, তাই কর। তখন উমার (রা) এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি এরূপ করেন, তাহলে বাহন কমে যাবে, বরং আপনি তাদের অবশিষ্ট রসদ নিয়ে আসতে আহ্বান করুন। অতঃপর তাদের রসদে বরকত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দো’আ করুন। আশা করা যায়, আল্লাহ এতে বরকত দান করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ হ্যাঁ তাই করব। অতঃপর তিনি চামড়ার একটি দস্তরখান আনিয়ে বিছালেন, অতঃপর তাদের অবশিষ্ট রসদ আনার জন্য ডাকলেন। সুতরাং তাদের কেউ এক মুঠি ভুট্টা নিয়ে আসলো, কেউবা এক মুঠি খেজুর আবার কেউবা এক টুকরো রুটি নিয়ে হাজির করলো। অবশেষে দস্তরখানের উপর যৎসামান্য রসদ জমা হলো। রাসূলুল্লাহ (সা) এগুলোর মধ্যে বরকতের জন্য দো’আ করার পর বলেনঃ এগুলো তোমাদের পাত্রে ভরে নিয়ে যাও। অতঃপর সকলেই তাদের পাত্র ভরে নিয়ে গেল; এমনকি এ বাহিনীর সবগুলো পাত্রই ভরে গেল এবং তারা তৃপ্তির সাথে খেয়েও আরো অবশিষ্ট রয়ে গেল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। যে ব্যক্তি সন্দেহাতীত ভাবে এ দু’টি কালেমা নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে, তাকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করা হবে না। (মুসলিম)


৪১৭. ইতবান ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি ছিলেন বদরের যুদ্ধের শহীদদের অন্যতম। তিনি বলেন, আমি আমার বানু সালেম গোত্রের (মসজিদে) নামায পড়াতাম। তাদের ও আমার মাঝে একটি কাঠ ছিল প্রতিবন্ধক। বৃষ্টির সময় এটা অতিক্রম করে তাদের মসজিদে উপস্থিত হওয়া আমার পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে পড়তো। তাই আমি রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে গিয়ে বললাম, আমার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে এবং আমার ও আমার গোত্রের মধ্যখানে অবস্থিত মাঠ, বৃষ্টির দিনে প্লাবিত হয়ে গেলে তা পার হওয়া আমার পক্ষে মুসকিল হয়ে পড়ে। তাই আমি চাই যে, আপনি এসে আমার বাড়ির একটি স্থানে নামায পড়াবেন এবং আমি সেই স্থানকেই আমার নামায পড়ার জায়গা হিসাবে নির্দিষ্ট করবো। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ ঠিক আছে আমি তা করবো। পরদিন সূর্য বেশ উপরে উঠলে রাসূল (সা) ও আবু বকর (রা) (আমার বাড়িতে) আসেন। রাসূল (সা) বাড়িতে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলেন, আমি তাকে অনুমতি দিলাম। তিনি না বসেই বলেনঃ তুমি তোমার ঘরের কোন জায়গায় আমার নামায পড়া পছন্দ করো? অতএব যে জায়গায় আমি তাঁর নামায পড়া পছন্দ করি, সেদিকে ইশারা করলাম। রাসূল (সা) সেখানে দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলে নামায শুরু করলেন এবং আমরা সারিবদ্ধভাবে তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। তিনি দুই রাকাআত নামায পড়ে সালাম ফিরালেন। আমরাও তাঁর সালাম ফিরানোর পর তার জন্য তৈরি ‘খাযিরা’ (এক প্রকার খাদ্য) গ্রহণের জন্য তাঁকে আটকে রাখলাম। মহল্লার লোকেরা শুনতে পেল যে, রাসূলুল্লাহ (সা) আমার বাড়িতে আছেন; তাই তারা দলে দলে এসে সমবেত হল। ফলে ঘরে লোকসংখ্যা বেড়ে গেলো। জনৈক ব্যক্তি বললো, মালিক কোথায়, আমি তো তাকে দেখছি না? অপর ব্যক্তি বললো, সে তো মুনাফিক, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে না। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ তুমি একথা বলো না। তুমি কি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ না যে, সে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে? ঐ ব্যক্তি বললো, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। আল্লাহর শপথ! আমরা তো দেখছি মুনাফিক ছাড়া আর কারো সাথে তার বন্ধুত্ব নেই, কথাও নাই। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ  “বলে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম)


৪১৮. উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) কিছু সংখ্যক বন্দীসহ আগমন করেন। তাদের মধ্যে জনৈকা বন্দিনী অস্থির হয়ে দৌড়াচ্ছিল আর বন্দীদের মধ্যে কোন শিশু পেলেই সে তাকে কোলে নিয়ে তার পেটের সাথে লাগিয়ে দুধ পান করাতো। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ তোমরা কি মনে করো এ মেয়েটি তার  সন্তানকে আগুনে ফেলতে পারে? আমরা বললাম, আল্লাহর শপথ! কখনো নয়। তিনি বলেনঃ এ মেয়েটি তার সন্তানের প্রতি যেরূপ সদয়, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি এর চাইতেও অনেক বেশি সদয়। (বুখারী, মুসলিম)


৪১৯. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূল (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ যখন সমস্ত মাখলুক সৃষ্টি করেন, তখন তাঁর কাছে আরশের উপর বিদ্যমান একটি কিতাবে লিখে রাখেনঃ আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর বিজয়ী হবে। অপর বর্ণনায় আছেঃ (আমার দয়া-অনুগ্রহ) আমার ক্রোধের উপর বিজয়ী হয়েছে। আরেক বর্ণনায় আছেঃ (আমার অনুকম্পা) আমার ক্রোধের উপর অগ্রগামী হয়েছে।

(বুখারী, মুসলিম)


৪২০. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা) বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ করুণাকে একশত ভাগে বিভক্তি করেছেন, অতঃপর নিরানব্বই ভাগই তাঁর কাছে রেখেছেন এবং মাত্র একভাগ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এই একটি মাত্র অংশের কারণে সমস্ত সৃষ্টি পরস্পরের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ করে থাকে, এমনকি চতুস্পদ জন্তু তার বাচ্চার উপর থেকে এই ভয়ে পা সরিয়ে নেয়, যেন সে কোন কষ্ট না পায়। অপর এক বর্ণনায় আছেঃ মহান আল্লাহর একশতটি রহমত (দয়া) আছে, তন্মধ্যে মাত্র একটি রহমত জিন, মানুষ, জীবজন্তু ও কীট-পতঙ্গের মাঝে প্রেরণ করেছেন। এর কারণেই তারা পরস্পরের প্রতি দয়া, অনুগ্রহ, ও প্রেম-প্রীতি প্রদর্শন করে এবং বন্য জন্তু তার বাচ্চাকে স্নেহ করে। আল্লাহ অবশিষ্ট নিরানব্বইটি রহমত বিলম্বিত করে রেখেছেন, এগুলো দ্বারা তিনি কিয়ামতের দিন তাঁর বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। (বুখারী, মুসলিম)

এ প্রসঙ্গে সালমান ফারসী (রা) থেকেও ইমাম মুসলিম (র) বর্ণনা করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহর একশতটি রহমত আছে। তন্মধ্যে একটি মাত্র রহমতের কারণে সৃষ্টিজগত পরস্পর স্নেহ-মমতা করে। আর নিরানব্বইটি রহমত কিয়ামতের দিনের জন্য রয়ে গেছে।

অপর এক বর্ণনায় আছেঃ আল্লাহ তা’আলা যেদিন আসমান ও যমিন সৃষ্টি করেন, সেদিন একশোটি রহমতও সৃষ্টি করেন। প্রতিটি রহমতই আসমান যমিনের মাঝখানে মহাশূন্যের মত বড়। তন্মধ্যে একটি রহমত তিনি পৃথিবীতে দিয়েছেন। এরই মাধ্যমে মা তার সন্তানকে স্নেহ করে এবং জীবজন্তু ও পশুপাখি পরস্পরকে স্নেহ করে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ পরিপূর্ণ রহমত প্রদর্শন করবেন।


৪২১. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) তাঁর মহান ও কল্যাণময় রবের কাছ থেকে বর্ণনা করে বলেনঃ কোন বান্দাহ একটি গুনাহ করে সে বললো, হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ করে দাও। তখন বিপুল বরকতের অধিকারী আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ একটি গুনাহ করেছে। সে জানে যে তার একজন রব আছেন, যিনি গুনাহ মাফ করেন, আবার এজন্য পাকড়াও করেন। সে পুনরায় গুনাহ করে বললো, হে আমার রব! আমার গুনাহ মাফ করে দাও। তখন মহান কল্যাণময় আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দাহ একটি গুনাহ করেছে। সে জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং গুনাহর জন্য পাকড়াও করেন। সে আবারও একটি গুনাহ করলো এবং বললো, হে রব! আমার গুনাহ মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দাহ একটি গুনাহ করেছে এবং সে জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং এর জন্য শাস্তিও দেন। সুতরাং আমি আমার বান্দাহকে মাফ করে দিলাম। অতএব সে যা ইচ্ছা তাই করুক।  (বুখারী, মুসলিম)

মহান আল্লাহর বাণীঃ  “সে যা ইচ্ছা তাই করুক  “-এর অর্থ হলো- সে যতদিন এরূপ গুনাহ করবে এবং তওবা করবে, আমি ততদিন তাকে মাফ করতে থাকবো। কেননা তওবা তার আগের সমস্ত গুনাহ খতম করে দেয়।৫৭


৫৭. তাওবার ব্যাপারে কুরআন মজীদে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে (আরবী) অর্থাৎ ‘খালিছ দিলে আল্লাহর কাছে তাওবা কর’।  এর মানে হচ্ছে, যে গুনাহ বা ভুলটা করা হয়েছে সেটার আর পুনরাবৃত্তি হবে না- এই দৃঢ় মনোভাব নিয়ে তাওবা করতে হবে। এহেন মনোভাবের পর নেহায়েত অনিবার্য কারণ ছাড়া কোনো গুনাহর পুনরাবৃত্তি হতে পারে না। তাছাড়া তাওবা কবুল হওয়ার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন মজীদে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, অজ্ঞতাবশতঃ কোন গুনাহ বা অন্যায় হয়ে গেলে অনতিবিলম্বে তাওবা করতে হবে। কিন্তু কেউ গুনাহ করতেই থাকবে আর মৃত্যুলগ্নে বলবে আমি তাওবা করছি, এমন তাওবা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। মোটকথা এ হাদীসে বান্দার গুনাহ করার জন্য ব্যাপক অনুমতি দেয়া হয়নি।


৪২২. আবু হুরাইরা (রা) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা ) বলেছেনঃ সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! তোমরা যদি গুনাহ না করতে, তাহলে আল্লাহ তোমাদের তুলে নিয়ে যেতেন এবং তোমাদের জায়গায় এমন এক জাতিকে আনতেন, যারা গুনাহ করে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতো, অতঃপর আল্লাহ তাদের মাফ করে দিতেন।৫৮ (মুসলিম)

৫৮. এখানে আসলে আল্লাহর অপার রহমতের কথা বর্ণনা করাই মূল উদ্দেশ্য।


৪২৩. আবু আইউব খালিদ ইবনে যায়িদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা যদি গুনাহ না করতে তাহলে আল্লাহ এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ করে মাফ চাইতো এবং আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিতেন। (মুসলিম)


৪২৪. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে ছিলাম। আমাদের সাথে আবু বকর (রা) ও উমার (রা) উপস্থিত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের মাঝ থেকে উঠে চলে গেলেন এবং ফিরে আসতে অনেক বিলম্ব করতে লাগলেন। এদিকে আমরা আশংকা করতে লাগলাম যে, আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না জানি তিনি আবার কোন বিপদে পড়েন। সুতরাং আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম। আতঙ্কগ্রস্তদের মধ্যে আমিই ছিলাম প্রথম ব্যক্তি। তাই আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সন্ধানে বেড়িয়ে পড়লাম, অতঃপর জনৈক আনসারীর বাগানে উপস্থিত হলাম। তিনি এ দীর্ঘ হাদীস এ পর্যন্ত বর্ণনা করেনঃ অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ তুমি যাও এ বাগানের বাইরে যার সাথে তোমার সাক্ষাত হবে, সে যদি তার আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহা নেই, তবে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করো। (মুসলিম)


৪২৫. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) ইবরাহীম (আ) সম্পর্কিত মহান আল্লাহর এ বাণী তিলাওয়াত করেনঃ (অনুবাদ ) “হে আমার রব! এ মূর্তিগুলো বহু মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে। কাজেই যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে, সে তো আমারই   “(সূরা ইবরাহীমঃ ৩৬)।  আর তিনি (নবী সা.) ঈসা (আ) -এর বাণী (যা কুরআনে আছে) তিলাওয়াত করেনঃ (অনুবাদ)  “আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন তাহলে (তা দেবার অধিকার আপনার আছে, কারণ) তারা তো আপনারই বান্দাহ। আর আপনি যদি  তাদের মাফ করে দেন, তাহলে (আপনি তাও করতে পারেন, কারণ) আপনি তো মহাপরাক্রমশালী ও বিজ্ঞানময়।  “(সূরা মাইদাঃ ১১৮)

অতঃপর তিনি তাঁর দু’হাত উঠিয়ে বলেনঃ  “হে আল্লাহ! আমার উম্মাত! আমার উম্মাত!  “এই বলে তিনি কেঁদে ফেলেন। মহামহিম আল্লাহ জিবরাঈলকে ডেকে বলেনঃ তুমি মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং তাঁকে তাঁর কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করো, তবে তোমার রব অবহিত আছেন। অতঃপর জিবরাঈল (আ) তাঁর কাছে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে যা বলার ছিল তা বলে দিলেন। এ ব্যাপারে তিনি (আল্লাহ ) তো সবই জানেন। সুতরাং মহান আল্লাহ জিবরাঈলকে বলেনঃ তুমি মুহাম্মাদের কাছে গিয়ে বলো, আমি আপনাকে আপনার উম্মাতের ব্যাপারে সন্তুষ্ট করবো, চিন্তাযুক্ত করবো না।  (মুসলিম)


৪২৬. মু’আয ইবনে জাবাল (রা) তিনি বলেন, আমি নবী (সা) এর পেছনে একটি গাধার পিঠে বসা ছিলাম। তিনি বলেনঃ হে মু’আয! তুমি কি জানো বান্দার উপর আল্লাহর হক কি এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কি? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেনঃ বান্দার উপর আল্লাহর হক হলোঃ তারা তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুতেই শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হলোঃ যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করে না, তিনি তাকে শাস্তি দিবেন না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি মানুষকে এ সুসংবাদ দিবো না? তিনি বলেনঃ তুমি তাদের এ সংবাদ দিয়ো না, তাহলে তারা এর উপর নির্ভর করে বসে থাকবে। (বুখারী, মুসলিম)


৪২৭. বারাআ ইবনে আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) বলেনঃ মুসলিমকে যখন কবরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তখন সে সাক্ষ্য দিবেঃ আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর রাসূল। এভাবে সাক্ষ্য দেয়াটা মহান আল্লাহর এ বাণী প্রমাণ করেঃ  “আল্লাহ ঈমানদার লোকদের সেই অটল বাক্যের (কালেমা তায়্যিবার) দরুন দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুদৃঢ় রাখেন।  “(সূরা ইবরাহীমঃ ২৭; বুখারী ও মুসলিম)


৪২৮. আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ কাফের ব্যক্তি কোন সৎকাজ করলে দুনিয়াতেই তাকে এর স্বাদ গ্রহণ করতে দেয়া হয়। আর ঈমানদারদের সৎ কাজগুলো আল্লাহ তা’আলা তার আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন এবং তাঁর আনুগত্যের জন্য দুনিয়াতেও তাকে রিযিক দেয়া হয়। অপর এক বর্ণনায় আছেঃ আল্লাহ ঈমানদার ব্যক্তির কোন নেক আমলকে বিনষ্ট করবেন না। দুনিয়াতেও তাকে এর বিনিময় দেয়া হয়, আখিরাতেও তাকে এর প্রতিদান দেয়া হবে। কাফের আল্লাহর ওয়াস্তে (অর্থাৎ নিঃস্বার্থভাবে) যে সৎ কাজ করে তাকে দুনিয়াতেই এর বিনিময় দেয়া হয়। আর সে যখন আখিরাতে পৌঁছবে, তখন তার কোন সৎ কাজই থাকবে না, যার বিনিময়ে কোন প্রতিদান দেয়া যেতে পারে।     (মুসলিম)


৪২৯. জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্ত হলোঃ তোমাদের কারো বাড়ীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত একটি বড় নহর, সে তাতে রোজ পাঁচবার গোসল করে।  (মুসলিম)


৪৩০. ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত।  তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ কোন মুসলমান মারা গেলে তার জানাযায় এরূপ চল্লিশ ব্যক্তি যদি হাযির হয়, যারা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকেই শরীক করেনি, তাহলে আল্লাহ মৃতের পক্ষে তাদের সুপারিশ গ্রহণ করেন।   ( মুসলিম)


৪৩১. ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা প্রায় চল্লিশজন লোক রাসূলুল্লাহ (সা) -এর একটি তাঁবুতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের এক চতুর্থাংশ লোক যদি জান্নাতবাসী হয় তাতে কি তোমরা খুশি হবে? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ তোমাদের এক তৃতীয়াংশ লোক যদি জান্নাতবাসী হয় তাতে কি তোমরা খুশি হবে? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ মুহাম্মাদের আত্মা যাঁর হাতে, সেই সত্তার শপথ! আমি আশা করি তোমরা (উম্মাতে মুহাম্মাদী) জান্নাতবাসীদের অর্ধেক সংখ্যক হবে। কেননা একমাত্র মুসলিম ব্যক্তিরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তোমরা হচ্ছো মুশরিকদের মাঝে কালো রংয়ের বলদের চামড়ায় কয়েকটি সাদা চুলের ন্যায় অথবা লাল বলদের চামড়ায় সামান্য কয়েক গাছি কালো চুলের ন্যায়।         (বুখারী, মুসলিম)


৪৩২. আবু মূসা আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমকে একজন ইহুদী এবং একজন খৃস্টান দিয়ে বলবেনঃ জাহান্নাম থেকে নাজাতের জন্য এই ব্যক্তি তোমার ফিদয়া বা বদলা। এই রাবী থেকে অপর একটি বর্ণনায় নবী (সা) বলেনঃ কিয়ামতের দিন মুসলমানদের মধ্যে কিছু লোক পাহাড়ের ন্যায় গুনাহর স্তূপ নিয়ে হাযির হবে। অতঃপর আল্লাহ তাদের এসব গুনাহ মাফ করে দিবেন।  (মুসলিম)

ইমাম নববী (র) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এর বাণীঃ  “প্রত্যেক মুসলিমকে একজন ইহুদী অথবা খৃস্টান দিয়ে বলবেনঃ জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য এই ব্যক্তি তোমার বদলা  “এর অর্থ হলোঃ এ পর্যায়ে আবু হুরাইরা (রা) থেকে একটি হাদীস বর্ণিত আছেঃ প্রত্যেক মানুষের জন্যই জান্নাতে একটি স্থান এবং জাহান্নামে একটি স্থান আছে। কোন ঈমানদার যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তার সাথে সাথেই একজন কাফেরও জাহান্নামে যাবে। কেননা কুফরের দরুন এটাই তার প্রাপ্য। আর হাদীসে উল্লেখিত ‘ফিকাকুকা’ শব্দের অর্থ হলো, তোমাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর জন্য পেশ করা হতো, আর এ হল তোমার বদলা। কেননা আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের জন্য একটি সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন, যাদের দিয়ে জাহান্নাম পরিপূর্ণভাবে ভরবেন। সুতরাং কাফেররা যেহেতু তাদের গুনাহ ও কুফরের দরুন তাতে প্রবেশ করবে তাই মুসলিমদের জন্য এটাই হবে ফিদইয়া বা বদলা। আল্লাহই ভালো জানেন।


৪৩৩. ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন মু’মিন ব্যক্তিকে তার রবের কাছে নিয়ে আসা হবে, এমন কি তিনি তাকে তাঁর রহমতের পর্দায় ঢেকে রাখবেন। অতঃপর তিনি তাকে তাঁর সমস্ত গুনাহর কথা স্বীকার করাবেন এবং বলবেনঃ তুমি কি এই গুনাহ চিনতে পারছো, তুমি কি এই গুনাহ চিনতে পারছো? সে বলবে, হে আমার রব! আমি চিনতে পারছি। তিনি বলবেনঃ ইহকালে আমি এটা তোমার পক্ষ থেকে ঢেকে রেখেছিলাম, আর আজ এটা তোমাকে মাফ করে দিচ্ছি। অতঃপর তাকে সৎ কাজসমূহের একটি আমলনামা দান করা হবে।   (বুখারী, মুসলিম)


৪৩৪.ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি একটি স্ত্রীলোককে চুমো দেয়। অতঃপর নবী (সা)-এর কাছে এসে তাঁকে তা অবহিত করে। এ সময় আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেন। (অনুবাদ)  “আর তুমি দিনের দুই প্রান্তে ও রাতের কিছু অংশে নামায কায়েম কর। নিশ্চয় সৎ কাজসমূহ গুনাহর কাজসমূহকে মুছে ফেলে  “(সূরা হূদঃ ১১৪)।  লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি শুধু আমার জন্য? তিনি বলেনঃ আমার সমস্ত উম্মাতের জন্যই।   (বুখারী, মুসলিম)


৪৩৫. আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা) এর কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো হদ্দযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। সুতরাং আপনি আমার উপর সেই শাস্তি কার্যকর করুন। অতঃপর নামাযের সময় উপস্থিত হলে সে রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে নামায পড়লো। নামায শেষ করে সে আবার বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হদ্দযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। সুতরাং আপনি আমাকে আল্লাহর বিধান কার্যকর করুন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি আমাদের সাথে নামাযে উপস্থিত হয়েছিলে? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ তোমাকে তো ক্ষমা করা হয়েছে। (এখানে হদ্দযোগ্য অপরাধ বলতে যেনার অপরাধ নয়। কারণ যেনার অপরাধ নামায দ্বারা ক্ষমা হয় না, মূলতঃ লোকটি এক মহিলাকে চুমো দিয়েছিল)। ( বুখারী,মুসলিম)


৪৩৬. আনাস (রা)বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ সেই বান্দার উপর অবশ্যই সন্তুষ্ট থাকেন, যে এক গ্রাস খাদ্য গ্রহণ করেই তাঁর প্রশংসা করে এবং এক ঢোক পানীয় পান করেই তাঁর প্রশংসা করে (আলহামদু লিল্লাহ বলে)।   (মুসলিম)


৪৩৭. আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) বলেছেনঃ মহান আল্লাহ দিনের গুনাহগারদের তওবা কবুল করার জন্য রাতের বেলা তাঁর হাত প্রসারিত করেন এবং রাতের গুনাহগারদের তওবা কবুল করার জন্য দিনের বেলায় তাঁর হাত প্রসারিত করেন। পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত না হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এরূপ করতে থাকবেন।  (মুসলিম)


৪৩৮. আবু নাজীহ আমর ইবনে আবাসা আস-সুলামী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহিলি যুগে আমি মনে করতাম, মানবজাতি পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত এবং তারা কোনো কিছুরই ধারক নয়। তারা মূর্তি পূজা করে। আমি শুনতে পেলাম, মক্কাতে এক ব্যক্তি নতুন নতুন কথা বলছে। আমি আমার বাহনে আরোহণ করে তাঁর কাছে গিয়ে দেখি তিনি রাসূল (সা)।  তিনি জনতার আড়ালে আড়ালে থাকেন। কেননা তাঁর সম্প্রদায় তাঁর উপর বাড়াবাড়ি করছে। সুতরাং আমি ফন্দি-ফিকির করে মক্কায় তাঁর কাছে পৌঁছলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বলেনঃ আমি একজন নবী। আমি বললাম, নবী কী? তিনি বলেনঃ আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন। আমি বললাম, আপনাকে কোন জিনিসসহ তিনি পাঠিয়েছেন? তিনি বলেনঃ তিনি আমাকে আত্মীয়তার সম্পর্ক জুড়ে রাখতে, মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে ফেলতে, ‘আল্লাহ এক’ একথা প্রচার করতে এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক না করতে বলতে পাঠিয়েছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার সাথে এরা (অনুসারী) কারা? তিনি বলেনঃ আযাদ ও ক্রীতদাস। সেদিন আবু বকর ও বিলাল (রা) তাঁর সাথে ছিলেন। আমি বললাম, আমিও আপনার অনুসারী। তিনি বলেনঃ এ সময় তুমি আমাকে অনুসরণ করতে সক্ষম হবে না। তুমি কি আমার ও লোকদের অবস্থা দেখতে পাচ্ছো না? বরং এখন তুমি তোমার বাড়ি ফিরে যাও। যখন তুমি শুনতে পাবে যে, আমি বিজয়ী হয়েছি, তখন আমার কাছে এসো।

তিনি বলেন, অতঃপর আমি বাড়ি ফিরে এলাম। তারপর রাসূল (সা) যখন মদিনায় চলে এলেন, আমি তখন আমার বাড়িতেই ছিলাম। তাঁর মদিনা আসার পর থেকে আমি যাবতীয় ঘটনা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করতাম। অবশেষে একদা আমার এলাকাবাসীদের একটি দল মদিনায় গিয়ে ফিরে আসার পর আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, যে লোকটি মদিনায় এসেছেন, তিনি কি করেন? তারা বললো, মানুষ খুব দ্রুত তাঁর কাছে ভিড় জমাচ্ছে এবং তাঁর স্বজাতিরা তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিল, কিন্তু তারা তাতে সক্ষম হয়নি। আমি মদিনায় উপস্থিত হয়ে তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে চিনেন? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, তুমি তো আমার সাথে মক্কায় সাক্ষাত করেছিলে। তিনি (রাবী) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আপনাকে যে বিষয়ের জ্ঞান দান করেছেন, আমি তা জানি না, এ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। আমাকে নামায সম্পর্কে বলুন। তিনি বলেন, তুমি ফজরের নামায পড়ার পর এক বর্শা পরিমাণ উঁচুতে সূর্য না উঠা পর্যন্ত নামায থেকে বিরত থাকো। কেননা এটা শয়তানের দু’টি শিং -এর মাঝখান দিয়ে উদিত হয় এবং এ সময় কাফেররা একে সিজদা করে। অতঃপর (সূর্য উদয়ের সময় পেরিয়ে গেলে) তুমি আবার নামায পড়ো, কেননা এ নামাযে ফেরেশতা উপস্থিত হয়ে নামাযীদের সাক্ষী হয়। আর এটা বর্শার ছায়ার সমান হয়ে যাওয়া (ঠিক দুপুরের পূর্ব) পর্যন্ত পড়তে পারো। অতঃপর নামায থেকে বিরত হও। কেননা এ সময়ে জাহান্নামের আগুন প্রজ্জ্বলিত করা হয়। অতঃপর ছায়া যখন কিছুটা হেলে যায়, তখন নামায পড়ো। কেননা এ নামাযে ফেরেশতা হাযির হয়ে নামাযীদের জন্য সাক্ষী হয়। অতঃপর তুমি আসরের নামায পড়ে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত বিরত থাকো। কেননা তা শয়তানের দু’টি শিং-এর মাঝখান দিয়ে অস্ত যায় এবং এ সময় কাফেররা একে সিজদা করে (সূর্য ডুবে গেলে মাগরিব পড়ো)।  রাবী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! উযূ সম্পর্কে কিছু বলুন। তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ উযূর পানি নিয়ে কুলি করলে এবং নাকে পানি দিয়ে তা পরিষ্কার করলে তার মুখ, মুখ-গহ্বর ও নাকের গুনাহসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন আল্লাহর হুকুম মোতাবেক তার মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন তার মুখমণ্ডলসহ দাড়ির পাশ থেকেও গুনাহসমূহ ঝড়ে যায়। অতঃপর সে যখন কনুই পর্যন্ত দু’হাত ধৌত করে তখন পানির সাথে তার দু’হাতের গুনাহসমূহ আঙ্গুলসমূহ দিয়ে ঝরে পড়ে যায়। অতঃপর সে যখন মাথা মসেহ করে, তখন তার মাথার গুনাহসমূহ চুলের অগ্রভাগ দিয়ে ঝরে পড়ে। অতঃপর সে যখন পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত ধৌত করে, তখন তার পায়ের ও দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহ থেকেও পানির সাথে গুনাহ ঝরে পড়ে যায়। অতঃপর সে যদি নামাযে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করে এবং তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে (যথারীতি নামায আদায় করে), যথোপযুক্ত মর্যাদা তাঁকে দান করে এবং একমাত্র আল্লাহর জন্য তার অন্তর খালি করে দেয়, তাহলে সে তার মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ট হওয়ার দিনের মত পবিত্র ও নিষ্পাপ হয়ে ফেরে।

অতঃপর এ হাদীসটি আমর ইবনে আবাসা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) -এর সাহাবী আবু উমামা (রা) -এর কাছে বর্ণনা করলে আবু উমামা তাকে বলেন, হে আমর ইবনে আবাসা! তুমি একটু চিন্তা করে কথাগুলো বলো। তুমি বলছো যে, একজন লোককে একই সময়ে এতোসব দেয়া হবে। আমর (রা) বলেন, হে আবু উমামা! আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং আমার হাড় পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে, আর আমার মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে। মহান আল্লাহর উপর এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপর মিথ্যা বলার আমার কোন প্রয়োজন নেই। আমি যদি এ হাদীস রাসূলুল্লাহ (সা) -এর কাছে একবার, দু’বার, তিনবার (এভাবে গণনা করেন), এমনকি সাতবার না শুনতাম, তাহলে আমি তা কখনো বর্ণনা করতাম না। কিন্তু আমি এটি তাঁর কাছ থেকে এর চাইতেও বেশি সংখ্যক বার শুনেছি।  (মুসলিম)


৪৩৯. আবু মূসা আশ’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা যখন কোন জাতির উপর অনুগ্রহ করার ইচ্ছা করেন, তখন সে জাতির পূর্বেই তাদের নবীকে উঠিয়ে নেন এবং তাঁকে তাদের জন্য অগ্রিম প্রতিনিধি ও পরকালের সঞ্চয় বানিয়ে দেন। আর যখন তিনি কোনো সম্প্রদায়কে ধ্বংস করতে চান, তখন তাদের জীবদ্দশায়ই তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন এবং তাঁর জীবনকালেই তাদেরকে ধ্বংস করেন। আর তিনি তা দেখতে থাকেন এবং তাদের ধ্বংস দেখে তিনি নিজের চোখ জুড়ান। কেননা তারা মিথ্যা মনে করেছিল এবং তাঁর নির্দেশ অমান্য করেছিল।  (মুসলিম)


Was this article helpful?

Related Articles